কেউ ডাকাতির দায়ে, কেউ নাবালিকাকে যৌন হেনস্থার দায়ে, কেউ শিশু পাচারের অপরাধে দশ বছর বা তারও বেশি সময় জেলে রয়েছেন। কারও কারাবাসের মেয়াদ দশ বছর পেরোতে কিছু দিন বাকি। আবার কেউ কারাবাসের মেয়াদ ফুরোলেও জরিমানার টাকা না মেটানোয় জেল খাটছেন। শনিবার, ছুটির দিনে এমনই ১৭টি ফৌজদারি আপিল মামলার নিষ্পত্তি হল কলকাতা হাইকোর্টে।
ছুটির দিনে ক্ষেত্র বিশেষে কলকাতা হাইকোর্টে মামলার শুনানি হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে শনিবার একলপ্তে ১৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকেই। সৌজন্যে, প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের অনুরোধ।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে প্রধান বিচারপতি দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের সঙ্গে কথা বলেন। দশ বছর বা তার বেশি পুরনো ফৌজদারি আপিল মামলাগুলি ছুটির দিনে আদালত বসিয়ে নিষ্পত্তি করা যায় কি না, তা ভেবে দেখতে অনুরোধ করেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য আইনজীবীদের তিনটি সংগঠনের কাছে প্রধান বিচারপতির অনুরোধের কথা জানিয়ে মতামত চান। তিনটি সংগঠনই জানিয়ে দেয়, শনিবার আদালতে আসতে রাজি নন আইনজীবীরা।
সূত্রের খবর, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সিদ্ধান্ত নেন, যে সব ফৌজদারি মামলায় দশ বছর বা তার বেশি সময় কেউ জেলে রয়েছেন এবং যাঁদের হয়ে হাইকোর্টে আপিল মামলা লড়ার আইনজীবী নেই, তেমন কিছু মামলা বিশেষ বেঞ্চ বসিয়ে নিষ্পত্তি করা হবে।
হাইকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় ও প্রবীণ সরকারি কৌঁসুলি নেগিব আহমেদ জানান, এই ধরনের মামলাগুলি ‘জেল আপিল’ বলেই পরিচিত। এই সব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের রাজ্য ‘লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস’-র পক্ষ থেকে আইনজীবী দেওয়া হয়ে থাকে। সেই রকমই ১৭টি মামলা বেছে নিয়ে সেগুলির নিষ্পত্তি করার জন্য পাঠানো হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে। এ দিন হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাগুলি ওঠে।
পিপি জানান, কয়েকটি ক্ষেত্রে ডিভিশন বেঞ্চ কারাবাসের মেয়াদ কমিয়ে দোষীকে মুক্তি দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কারাবাসের মেয়াদ ফুরোলেও জরিমানার টাকা অনাদায়ে দোষী ব্যক্তির আরও দু’বছর কারাবাস হওয়ার কথা ছিল। ডিভিশন বেঞ্চ কয়েকটি ক্ষেত্রে জরিমানা মঞ্জুর করে মুক্তি দিয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে জরিমানার টাকা অনাদায়ে দু’বছরের বদলে ছ’মাস কারাবাসের নির্দেশ দিয়ে মুক্তি দিতে বলেছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দোষীরা কারাবাসের মেয়াদ কাটিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও নিয়মমাফিক আপিল মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। নিম্ন আদালতের নির্দেশ বহাল রেখে সেই সব মামলারও নিষ্পত্তি করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। পিপি জানান, রাজ্যে এই ধরনের পুরনো জেল আপিলের সংখ্যা কম নয়। তাঁর মতে, এ ভাবে শনিবার আদালত বসিয়ে মামলাগুলির নিষ্পত্তি হলে সংশোধনাগারগুলিতে বন্দিদের সংখ্যা কমবে।