CV Ananda Bose Vs Bratya Basu

রাজ্যপাল ‘কবি’, শিক্ষা সেলের সভায় আক্রমণ ব্রাত্যের

রাজ্যপালের পদ অবলুপ্তি নিয়ে কেন্দ্রকেও বিঁধেছেন ব্রাত্য। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ব্রিটিশ আমলের অনেক কিছুই তো বাতিল করতে চাইছে কেন্দ্র। ঔপনিবেশিক চিহ্ন মুছে দিতে চাইছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৩৮
Share:

(বাঁ দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

রাজ্য এবং রাজ্যপালের দ্বন্দ্ব অব্যাহত! সম্প্রতি উচ্চ শিক্ষা এবং উপাচার্য নিয়ে রাজ্যপালকে নানা ভাবে আক্রমণ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শনিবারও তারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এ দিন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল শিক্ষা সেল। সেই সভায় ব্রাত্য বলেন, ‘‘রাজভবনে কবি বসে আছেন। কিন্তু কবি তুমি কুমোরের নয়, তুমি কামারেরও নয়। তুমি রাজার। কবির প্যাশন থাকে। আবেগ থাকে।’’ এখানেই শেষ নয়। রাজ্যপালের পদকে এ দিন ‘সাদা হাতি’-র সঙ্গে তুলনা করেছেন ব্রাত্য। বলেছেন, ‘‘একটা সাদা হাতির মতো পদ, যে পদ রাখার আদৌ কোনও যৌক্তিকতা আছে কিনা, সে রকম লোক এসে যদি কুক্ষিগত করতে চায়। দু’টো আদর্শের লড়াই চলছে। ওরা সব কিছুর দখল নিতে চাইছে।’’

Advertisement

রাজ্যপালের পদ অবলুপ্তি নিয়ে কেন্দ্রকেও বিঁধেছেন ব্রাত্য। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ব্রিটিশ আমলের অনেক কিছুই তো বাতিল করতে চাইছে কেন্দ্র। ঔপনিবেশিক চিহ্ন মুছে দিতে চাইছে। রাজ্যপাল পদ বিলোপের মাধ্যমে তা শুরু করুক।’’

রাজ্যে সরকার নিযুক্ত উপাচার্যদের নিয়োগ বাতিল করেছিল হাই কোর্ট। তার পরে উপাচার্যেরা রাজভবনে গিয়ে পদত্যাগ করেন। পরবর্তী কালে সেই উপাচার্য নিয়েই দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং সেই দ্বন্দ্ব ক্রমে বেড়েই চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাজ্যপাল নিজের পছন্দ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। তাতেই আপত্তি রাজ্য সরকারের। রাজ্যপাল নিযুক্ত অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে আর্থিক অবরোধের কথা বলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়টি গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালত এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে এবং কী ভাবে উপাচার্য বাছাই করতে হবে তার পথ বাতলেছে। তার পরেও অবশ্য দ্বন্দ্ব মেটেনি।

Advertisement

এ দিনও রাজ্যপাল নিযুক্ত অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের প্রতিও শিক্ষামন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এখন কিছু উপাচার্য ডুডুও খেতে চাইছেন আবার তামাকও। তাদের হয়েই এক সময় আমি লড়েছিলাম। যাঁরা ডুডু ও তামাক খেলেন, আমি কি তাদের হুমকিদেব? আমি কি তাদের বলব, এক মাঘে শীত যায় না? বলব না। কিন্তু ধারে-কাছে কিছু একটা বলব।’’ এর পরে কার্যত আরও সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা ডুডুও খাচ্ছেন,তামাকও খাচ্ছেন, তাঁরা তো রাজ্যেই থাকবেন। কোনও খারাপ কিছু করব না। তার পর দেখা যাবে কী হয়।’’ ‘কী হতে পারে,’ তার ইঙ্গিতও যেন মিলেছে মন্ত্রীর কথায়। তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘কবির মেয়াদ তো আর পাঁচ-ছ’মাস। আমরা তিনবারের শপথ নেওয়া। আমার নেত্রী সারা ভারতবর্ষের এক নম্বর আইকন। তাঁকে আপনি ছোট করতে চাইছেন। বলছেন, আমি ওপরে কথা বলে নেব। আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমান করছেন।’’

এর আগে রাজ্যপালের উদ্দেশে ব্রাত্যর সমাজ মাধ্যমে বক্তব্য নিয়ে রাজভবন ‘বিশেষ বার্তা’ দিয়েছিল। তবে সেই ‘বিশেষ বার্তা’ মধ্যরাতে খামবন্ধ চিঠি হয়ে দিল্লিতে পৌঁছেছিল। সেই চিঠি প্রসঙ্গে শুক্রবার রাজ্যপালের বক্তব্য ছিল, ‘‘চিঠি মিস্ট্রি থেকে হিস্ট্রি হয়ে গিয়েছে।’’ সেই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে এ দিন ব্রাত্য বলেন, ‘‘মিস্ট্রি যেহেতু হিস্ট্রিতে চলে গেছে। উনি চাইছেন, ওতে যেন দৃষ্টি না দিই। ফলে ওই মিস্ট্রি বা হিস্ট্রিতে আমরা যদি দৃষ্টি দিই, আপনারা অনাসৃষ্টি করবেন। সেটা ওঁর পছন্দ হবে না।’’

এ দিন রাজ্যপালের উদ্দেশে ব্রাত্যর মন্তব্য নিয়ে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের এক দল নেতা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। তাই দলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই সব বলছেন। এক জন শিক্ষিত মন্ত্রীর মুখ থেকে এই ভাষা প্রত্যাশা করা যায় না। তাঁদের এই বক্তব্য নিয়ে বহুবার আদালতে গিয়েছিলেন, কী হয়েছিল সবাই জানে। সংবিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কিছু দিন রাজত্ব করা যায়, চিরকাল টিকে থাকা যায় না। যাঁরা পাশে বসে হাততালি দিচ্ছেন তাঁদের ইতিহাসও জানা আছে। অবস্থান বদল করতে তাঁদের যে বেশি সময় লাগে না সেটা বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর মাথায় রাখা উচিত।’’ আজ, রবিবার অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের নিয়ে রাজভবনে বৈঠক ডেকেছেন রাজ্যপাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন