প্রধানমন্ত্রীর জন্য দেরি মুখ্যমন্ত্রীর, আকাশে ঘুরপাক আধঘণ্টা

বাগডোগরা বিমানবন্দরের এক কর্তা বুধবার রাতে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিমান ছাড়ার সময়ে আরও দু’টি বিমান নামার জন্য বাগডোগরার আকাশে চলে এসেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৬
Share:

ব্রিগেডে নজরদারি: বহুতলের উপরে কেন্দ্রীয় বাহিনী। নিজস্ব চিত্র

বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উড়ানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিমানকে প্রায় আধঘণ্টা বাগডোগরার আকাশে ঘুরে বেড়াতে হল। দিল্লি বা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে বিষয়টি নিয়ে কোনও কিছু জানানো না হলেও কোচবিহারের সভায় মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, সাধারণ যাত্রীর হেনস্থা নিয়ে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এক জন ভিআইপিকে নিরাপত্তা দেওয়া হোক। কিন্তু, তার জন্য সাধারণ মানুষের কেন অসুবিধা হবে?’’ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও যে প্রায় দেড়শো যাত্রী এ দিন বিমানে ছিলেন সকলেরই বাগডোগরা পৌঁছতে দেরি হয়েছে।

Advertisement

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিশেষ বিমান বাগডোগরা ছাড়ে দুপুর ২টো ৪৩ মিনিটে। মুখ্যমন্ত্রী ইন্ডিগোর যে বিমানে করে যাচ্ছিলেন সেটি বাগডোগরার আকাশে পৌঁছয় তিনটে নাগাদ। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর বিমান ছেড়ে যাওয়ার ১৭ মিনিট পরে। কিন্তু, তখন ইন্ডিগোর পাইলট নামতে চাইলে তাঁকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। বিমানটির বাগডোগরায় নামার আনুমানিক সময় ছিল ৩টে ৫ মিনিট। কিন্তু, আকাশে চক্কর কেটে সেটি ৩টে ২৫ মিনিটে নামে। ওই বিমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, সেই বার্তা পাইলট বাগডোগরার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে দিয়েছিলেন কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি।

বাগডোগরা বিমানবন্দরের এক কর্তা বুধবার রাতে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিমান ছাড়ার সময়ে আরও দু’টি বিমান নামার জন্য বাগডোগরার আকাশে চলে এসেছিল। এমনকি, সেই সময়ে আরও দু’টি যাত্রিবাহী বিমান বাগডোগরা থেকে ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। প্রধানমন্ত্রীর বিমান আকাশে উড়ে যাওয়ার পরে আগে চলে আসা দু’টি বিমানকে নামিয়ে আনা হয়। বিমানবন্দরে অপেক্ষমান দু’টি বিমানকে ছাড়া হয়। তারপরে ইন্ডিগোর বিমানকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়। কর্তার মতে, সেই উড়ানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এটা এটিসি জানলে হয়তো বিমানটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে নামিয়ে আনা হতো।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দেশের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর উড়ানে বিশেষ ছাড় দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। মাঝ আকাশে থাকাকালীন এই তিনটি বিমানের থেকে উপর-নীচে অন্য বিমানের দূরত্ব ন্যুনতম ২ হাজার ফুট রাখা হয়। সাধারণ ভাবে আকাশে দুই বিমানের মাঝে সেই দূরত্ব থাকে ১ হাজার ফুট। তবে, কোনও বিমানবন্দরে নামা-ওঠার ক্ষেত্রে আলাদা কোনও অগ্রাধিকার দেওয়ার নিয়ম নেই। শুধু দেখা হয়, ওই তিনটি ক্ষেত্রে বিমান নামাওঠার সময়ে যাতে কোনও দেরি না হয়। এই নিয়ম অসামরিক বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে।

বাগডোগরা বিমানবন্দর বায়ুসেনার অধীনস্থ। সেখানকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) নিয়ন্ত্রণ করে বায়ুসেনা। এ দিন বাগডোগরা থেকে বায়ুসেনার এক অফিসার জানান, যাত্রিবাহী বিমান আগে এলে-আগে নামতে পারবে ভিত্তিতে অগ্রাধিকার পাবে। এমনকি, সে রকম বিমানে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিআইপি থাকলেও। তাঁর দাবি, নিয়ম মেনেই নামানো হয়েছে ইন্ডিগোর বিমানকে।

যদিও মুখ্যমন্ত্রী দিনহাটার সভায় বলেন, ‘‘অনেকক্ষণ থেকে আপনারা অপেক্ষা করছেন। আরও চল্লিশ মিনিট আগে আমরা আসতে পারতাম। কিন্তু, বাবু প্রধানমন্ত্রী, বড় নেতা। তিনি যতক্ষণ শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা না পৌঁছেছেন ততক্ষণ আমাদের প্লেন আটকেছিল আকাশে। এখান থেকে প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার সময়ে অন্য বিমানের গতিবিধি বন্ধ রাখা হয়, তা বুঝি। আমরা কলকাতা থেকে আসছিলাম। পুরো উল্টো রুট। বাগডোগরার কাছে এসে, পাঁচ মিনিটের মধ্যে যখন পৌঁছনোর কথা, তখন পাইলট ঘোষণা করলেন, ভিআইপি মুভমেন্টের জন্য বাগডোগরা বিমানবন্দর বন্ধ আছে। আরও চল্লিশ মিনিট আমরা বসে থাকলাম বিমানে।’’

মমতার অভিযোগ, ‘‘আমি কারও নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলি না। ওঁকে যত ইচ্ছে সিকিয়োরিটি দেওয়া হোক, তা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের যাতে হয়রানি না হয়, এটা দেখার দরকার। আপনার যত ইচ্ছে সিকিয়োরিটি নিন, আমরা চাই যা আছে, তার থেকেও আপনার সিকিয়োরিটি বাড়ুক। ওই সিকিয়োরিটি নিয়ে আপনি ঘোরাফেরা করুন। কারণ মানুষের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ নেই। আপনাদের একটি মিটিংকে কেন্দ্র করে রাস্তা বন্ধ, আকাশ বন্ধ সব পরিষেবা বন্ধ এটা ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন