বিএড বইয়ে ‘কালিমালিপ্ত’ যাদবপুর, বাড়ছে বিতর্ক

বর্তমান ছাত্র আন্দোলন জঙ্গি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ সময় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আটকে রাখা, শিক্ষিকাদের শালীনতা বিঘ্নিত করা, শিক্ষকদের মারধরের মতো বিষয় ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে।

Advertisement

অভিরূপ দত্ত

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৩
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

বর্তমান ছাত্র আন্দোলন জঙ্গি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ সময় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আটকে রাখা, শিক্ষিকাদের শালীনতা বিঘ্নিত করা, শিক্ষকদের মারধরের মতো বিষয় ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব টিচার্স ট্রেনিং, এডুকেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডব্লিউবিইউটিটিপিএ) অনুমোদিত বিএড পাঠক্রমের প্রথম সিমেস্টারে যে-সব বই পড়তে হয়, তার মধ্যে শিক্ষা ও সমকালীন ভারত বিষয়ে একটি বইয়ে এমনই লেখা হয়েছে। তার পরই সাম্প্রতিক কালের ‘নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলন’-এর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে। বিতর্ক বেধেছে তাকে কেন্দ্র করেই।

Advertisement

শিক্ষক প্রশিক্ষণের বইয়ে ছাত্র-বিক্ষোভ সংক্রান্ত লেখায় একটি বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কেন থাকবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্র ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। ডব্লিউবিইউটিটিপিএ-র উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বইটা আমার সময়ে হয়নি। আগে যিনি ছিলেন, তাঁর সময়ে হয়েছিল। তিনি ভাল বলতে পারবেন।’’ কলকাতার যে-প্রকাশনা সংস্থার তরফে বইটি প্রকাশ করা হয়েছে, তাঁদের দফতরে গেলে কেউ কথা বলতে চাননি। নাম প্রকাশ না-করার শর্তে সংস্থার এক আধিকারিক জানান, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বললে সবাই সহজে চিনতে পারবেন, তাদের নামই ব্যবহার করা হয়েছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের অভিযোগ, ‘‘এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা। যাদবপুরে পড়ুয়ারা নীতির উপরে ভিত্তি করে আন্দোলন করেন, তাঁরা শিক্ষক নিগ্রহ করে না। তবে অন্যত্র এমন আন্দোলন দেখা যায়।’’ যাদবপুরের প্রাক্তন পড়ুয়া এবং এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হাস্যকর। প্রতিবাদী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। যাকে দীর্ঘদিন ধরেই কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।’’

Advertisement

বইয়ের পাতার সেই বিতর্কিত অংশ।

‘হোক কলরব’ আন্দোলনের সময় যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জিএস ছিলেন চিরঞ্জিত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ভারতে ছাত্র আন্দোলনের ক্ষেত্রে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্য রকম জায়গা তৈরি করেছে। সমাজেও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বেশির ভাগ সময়েই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই ধরনের অভিযোগ করা হয়।’’ নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়।’’ নির্দিষ্ট করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে উদাহরণ হিসেবে দেখানো ঠিক নয় বলে মনে করেন প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি শ্রীদাম জানাও। তবে তিনি বলেন, ‘‘এখন যে-ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে, তা অনেক সময় সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: ইঞ্জিনিয়ার থেকে জঙ্গি, সামিরের সাজা কাল

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড বিভাগের প্রধান মুক্তিপদ সিংহের বক্তব্য, চার দিকে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে-ভাবে অরাজকতা চলছে, তার মধ্যে যাদবপুর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে পড়ুয়ারা আদর্শভিত্তিক আন্দোলন করেন। ‘‘প্রগতিশীল আন্দোলনের জন্যই এখানে টাকা দিয়ে ভর্তির ঘটনা ঘটেনি,’’ বলেন মুক্তিপদবাবু।

আরও পড়ুন: কিছু ভ্রমণ ও মুদ্রা বিনিময় সংস্থায় হানা

বিএড স্তরের পাঠ্যক্রমে ছাত্র আন্দোলনকে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হলে ভবিষ্যতে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, বাংলার ছাত্র আন্দোলন ঐতিহাসিক এবং তার ঐতিহ্য এখনও বহমান। তাকে খাটো করে দেখানো ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই অন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হয়। কিন্তু তেমন আন্দোলনের উদাহরণ হিসেবে যদি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ধরা হয়, আমি মনে করি, তা অন্যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন