পুলিশি ‘বিভ্রান্তি’র কারণেই কি ঘোরালো পরিস্থিতি

এমনিতেই যাদবপুর-কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে একটা গুঞ্জন শুরু হয়েছিল।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৯
Share:

বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে পুলিশের সামনেই চলে তাণ্ডব। নিজস্ব চিত্র

পুলিশ কি ‘বিভ্রান্ত’ ছিল? নিজেদের কী করণীয়, তা কি স্পষ্ট করে বুঝতে পারেনি তারা? তাতেই কি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বৃহস্পতিবার হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল? যাদবপুর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এমনই সব প্রশ্ন ঘুরছে প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের একাংশের মধ্যে।

Advertisement

এমনিতেই যাদবপুর-কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে একটা গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাণ্ডব চলাকালীন বাইরে পুলিশের ভূমিকা কেন যথেষ্ট সক্রিয় ছিল না, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। শুক্রবার সেই বিতর্কই আলাদা মাত্রা পেয়েছে রাজভবন থেকে প্রকাশিত এক প্রেস বিবৃতির প্রেক্ষিতে।—যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় সরাসরি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে!

ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনার পিছনে পুলিশের ব্যর্থতাও দায়ী। এমনকি, রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময়ে যে ভাবে অপর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ছিল, আলাদা ভাবে তার উল্লেখও করা হয়েছে বিবৃতিতে।

Advertisement

প্রাক্তন পুলিশকর্তা তুষার তালুকদারের মতে, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষ না ডাকলে পুলিশ ঢোকে না, এটাই অলিখিত নিয়ম। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাঙ্গনের বাইরে পুলিশের আরও একটু সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল, বিশেষ করে যখন একটি দলের

সমর্থকেরা স্লোগান দিয়ে ভিতরে ঢুকছিলেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে মনে হয়েছে যে পুলিশ খুব বিভ্রান্ত ছিল। একেই পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ক্ষেত্রে সাধারণ

ভাবে যে নিরাপত্তা থাকে, সেটা এখানে ছিল না। অন্য দিকে, যে পুলিশকর্মীরা ছিলেন, তাঁরা ওই পরিস্থিতিতে কী করা দরকার, কী করা উচিত, সে ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ পাচ্ছিলেন না।’’ প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের একাংশ এ-ও মনে করছেন, এটা গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতা। তুষারবাবুর কথায়, ‘‘পুরো অনুষ্ঠানকে একটা নিয়মিত বিষয়

বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। সেটা কেন্দ্র করে যে এমন কিছু হতে পারে, সে সম্পর্কে যথেষ্ট খবরাখবর ছিল না বলেই মনে হয়েছে।’’

প্রাক্তন পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম আবার পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার পিছনে ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ দেখছেন। নজরুলবাবুর কথায়, ‘‘যে কারণের জন্য রাজনৈতিক ধর্নামঞ্চে পুলিশ যোগদান করে, উর্দি পরা পুলিশ মার খেলেও অভিযুক্তদের শাস্তি হয় না, সেই একই কারণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হেনস্থা রুখতে ওই দিন পুলিশ যায়নি। কারণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কিছু হলেও তো পুলিশের পদোন্নতি আটকাবে না! পুরোটাই যে রাজ্যের শাসকদলের হাতে। পুলিশ দেখছে, শাসকদল যাদের হেনস্থা করতে চাইছে, সেটা যখন অন্য লোক করছে, তখন তারাই বা কেন সেখানে বাধা দেবে? ’’

যদিও শিক্ষাঙ্গনে পুলিশি প্রবেশ ঠিক কি না, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত অনেকেই। প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের একাংশ আবার বলছেন, সার্বিক ভাবে যে কোনও জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের সদর্থক ভূমিকা নেওয়া উচিত। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনের ক্ষেত্রে বিষয়টা এতটা সরল থাকে না। প্রাক্তন পুলিশকর্তা প্রসূন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে বললে এটা সকলেই জানেন, আইনশৃঙ্খলার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশের বড় ভূমিকা থাকে। কে ডাকল, কে ডাকল না, তার উপরে খুব বেশি নির্ভর করে না। তবে শিক্ষাঙ্গন হলে বিষয়টি স্পর্শকাতর হয়ে যায়। ফলে পুলিশের এগোলেও বিপদ, পিছোলেও বিপদ! যদিও ঘটনাস্থলে না থাকলে এ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’’

এ প্রসঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি। তবে এ বিষয়ে পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘উপাচার্য না ডাকলে আমরা ভিতরে ঢুকতে পারি না। তাই সমস্ত প্রস্তুতি নিয়েও আমাদের বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন