Calcutta High Court

পরীক্ষায় বসতে দিন, শুরুর পাঁচ মিনিট আগে নির্দেশ বিচারপতি চন্দের, আদালতের হস্তক্ষেপে স্বস্তিতে আইনের ছাত্র

ছাত্রের আশঙ্কা, টাকা না হয় জোগাড় করা যাবে। কিন্তু এই শেষ মুহূর্তে এসে পরীক্ষা দেওয়া কি সম্ভব হবে? কারণ, পরীক্ষার জন্য তাঁর আবেদন গ্রহণ না হওয়ায় অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়নি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫ ০৯:৪৮
Share:

কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আদালতে চলছে আইনি লড়াই। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে পরীক্ষার্থী। কাছে নেই অ্যাডমিট কার্ড। ভিতরে ঢোকার অনুমতিও পাওয়া যায়নি। কয়েক ঘণ্টা পার। আর মাত্র পাঁচ মিনিট সময়। এর মধ্যে কোনও কিছু না ঘটলে চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা দেওয়া হবে না। পরীক্ষা শুরুর তিন মিনিট আগে হঠাৎই এল খবর। পরীক্ষায় বসার অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। নির্দেশ পাঠিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি কৌশিক চন্দের নির্দেশ, কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত আপাতত বাতিল। আইনের ওই ছাত্র পরীক্ষায় বসবেন। বাধাহীন ভাবে তাঁকে পরীক্ষায় বসতে দেবেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। মোবাইল ফোনে আদালতের ওই নির্দেশ শুনে তড়িঘড়ি কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়ার বন্দোবস্ত করেন। তিনি অ্যাডমিট কার্ড ছাড়াই পরীক্ষা দেন। সম্প্রতি হাই কোর্টের হস্তক্ষেপে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র এ ভাবেই পরীক্ষা দেন।

Advertisement

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কলেজে আইনি বিষয়ে শেষ বর্ষে পড়ছিলেন ওই ছাত্র। কলেজের অভিযোগ, ওই ছাত্র সেমিস্টারের কোনও ফি জমা দেননি। তাঁর জরিমানা সমেত ফি ৬০ হাজার টাকার বেশি। ছাত্র জানান, শেষ পরীক্ষায় সময় কলেজ জানায় বকেয়া ফি না দিলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে তাঁর অ্যাডমিট কার্ডের জন্য আবেদন করাও হয়নি। এই অবস্থায় কলেজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই ছাত্র। আদালতে নিজের মামলায় নিজেই সওয়াল করেন তিনি। কলেজের বক্তব্য জানতে চান বিচারপতি চন্দ। এই অবস্থায় ছাত্রের আশঙ্কা, টাকা না হয় জোগাড় করা যাবে। কিন্তু এই শেষ মুহূর্তে এসে পরীক্ষা দেওয়া কি সম্ভব হবে? কারণ, পরীক্ষার জন্য তাঁর আবেদন গ্রহণ না হওয়ায় অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়নি। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন পরীক্ষা রয়েছে। এমতাবস্থায় পরীক্ষার আগের দিন কলেজ ফি ৬০ হাজার টাকা অনলাইনে পাঠান ওই ছাত্র। পরীক্ষার দিন ভোরে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে হাই কোর্টে যান তিনি। সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে রওনা হন হাওড়া স্টেশনের উদ্দেশে। সেখান থেকে সকাল ৮টা নাগাদ হাওড়া থেকে বর্ধমান যাওয়ার ট্রেন ধরেন। পরীক্ষা দিতে পোঁছে যান বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে। পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ায় হাই কোর্টের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। দুপুর ১২টা থেকে পরীক্ষা শুরু।

সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বিচারপতি চন্দের নজরে বিষয়টি আসতেই তড়িঘড়ি শুনানির বন্দোবস্ত করেন। তিনি জানান, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীকে এখনই বিষয়টি জানানো হোক। তাঁরা যেন শুনানিতে উপস্থিত হন। খোঁজ শুরু হয় ওই দুই আইনজীবীর। শেষমেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এজলাসে হাজির হন। ছাত্রের আইনজীবী সুদীপকুমার খাঁয়ের সওয়াল, তাঁর মক্কেল ৬০ হাজার টাকা ফি জমা করেছেন। এখন তাঁকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী জানান, কলেজের সঙ্গে ওই ছাত্র বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। তবে সে পরীক্ষায় বসতে চাইলে কোনও আপত্তি নেই। তাঁর উদ্দেশে আদালত জানায়, ওই ছাত্রকে এখনই অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হোক। আর এখন অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া না গেলেও পরীক্ষায় বসতে দিতে হবে। অ্যাডমিট কার্ড ছাড়াই পরীক্ষা দেবেন ওই ছাত্র। এজলাস থেকেই ওই আইনজীবীকে বিচারপতি নির্দেশ দেন, কলেজকে এখান থেকেই ফোন করুন। বলুন, আদালতের নির্দেশ রয়েছে পরীক্ষায় বসতে দিতেই হবে। সেই মতো বেলা ১১টা ৫৭ মিনিটে কলেজে ফোন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই আইনজীবী। পুরো বিষয়টি তিনি জানান কলেজ কর্তৃপক্ষকে। শুরুর এক মিনিট আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করেন ওই ছাত্র।

Advertisement

বিচারপতি চন্দ জানান, ৬০ হাজার টাকা জমা দেওয়া নিয়ে হলফনামা দেবেন ওই ছাত্র। টাকা পেয়েছেন কি না পাল্টা হলফনামা দিয়ে তা জানাবে কলেজ। ছাত্রের অ্যাডমিট কার্ডের বিষয়টি নিয়ে হলফনামা দেবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। হাই কোর্টের নির্দেশ, ওই ছাত্র পরীক্ষায দিলেও আদালতের অনুমতি ছাড়া ফল জানতে পারবেন না। অর্থাৎ, পরীক্ষার ফলাফল আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রকাশ করতে হবে। আগামী সোমবার আবার মামলাটি শুনবে আদালত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement