তিন তালাক

ল বোর্ডকে কেন মানব, জেহাদে অনড় তিন কন্যা

তিন তালাক চাই না, বলছেন তিন কন্যা। আফরিন রহমান, জাকিয়া সোমান ও নুরজাহান সাফিয়া নিয়াজ। মুসলিম ল বোর্ডের ‘হুকুম’ অগ্রাহ্য করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ওঁরা তিন জন। কে এই আফরিন-জাকিয়া-নুরজাহান?

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১৪
Share:

লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জাকিয়া সোমান এবং নূরজাহান সাফিয়া নিয়াজ। বুধবার উত্তম মঞ্চে। ছবি :স্বাতী চক্রবর্তী।

তিন তালাক চাই না, বলছেন তিন কন্যা।

Advertisement

আফরিন রহমান, জাকিয়া সোমান ও নুরজাহান সাফিয়া নিয়াজ। মুসলিম ল বোর্ডের ‘হুকুম’ অগ্রাহ্য করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ওঁরা তিন জন।

কে এই আফরিন-জাকিয়া-নুরজাহান?

Advertisement

‘ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন করেন তিন জন। মুম্বইয়ে দফতর ওঁদের।

শুরুটা হয়েছিল সেই চার বছর আগে। তখন বিপিএল তালিকায় নাম তোলা বা নাগরিকত্বের অধিকারের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছিলেন ওঁরা। সাধারণ মুসলিম মহিলারা এসে তাঁদের ধরলেন, এ সব পরে হবে। আগে তিন তালাক সমস্যার সমাধানে কিছু একটা করুন! সেই আর্জি থেকেই লড়াই শুরু করার রসদ পেয়েছিলেন ওঁরা তিন জন। যে লড়াই এখন সুপ্রিম কোর্টের দরজা ঘুরে গোটা দেশের মুসলিম সমাজ ও সংখ্যালঘু রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে!

লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর চাপ দিয়ে নানা সময়ে হুমকি-ফোন এসেছে। মৌলবিদের ফতোয়া জারি হয়েছে নানাবিধ। কিছু রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সামনে রেখেই তিন তালাকের পক্ষে সওয়াল করেছে। তবু তাঁরা অনড়! রীতিমতো খসড়া তৈরি করে ফেলেছেন বিধিবদ্ধ মুসলিম পারিবারিক আইনের। চাইছেন, সর্বোচ্চ আদালতে যেমন লড়াই চলছে, চলুক। তার বাইরে দেশের সংসদও ওই আইনের খসড়া নিয়ে বির্তক করুক। মুসলিম মহিলাদের সমানাধিকার সুরক্ষিত হোক।

এই লড়াইয়ের কথা সবাইকে বোঝাতে গোটা দেশ চষে ফেলছেন তাঁরা। তিন তালাকের ভুক্তভোগী শায়রা বানু ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করার পরে তিন জনই তাতে যোগ দিয়েছেন। এই মামলাতেই কেন্দ্রকে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে হলফনামা দিতে হয়েছে।

কখনও মনে হয়নি, এই ধরনের প্রচার ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে?

জাকিয়া বললেন, ‘‘আদালতে যাওয়া ও আইনের খসড়া তৈরির আগে বারবার কোরান-শরিফ পড়ে দেখেছি, ধর্মীয় আবেগে আঘাত করছি না তো? খোদার উপরে খোদকারি করার অধিকার তো কারও নেই! কেন শুনব মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের হুকুম?’’ কিন্তু তিন তালাক প্রথা তুলে দেওয়া মানে তো অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষেই সওয়াল করা, তাই না?

সপাট জবাব এল মুম্বইয়ের ‘টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস’ (টিস)-এর প্রাক্তনী নুরজাহানের কাছ থেকে— ‘‘তিন তালাকের সঙ্গে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে গুলিয়ে দেওয়া একটা অপচেষ্টা। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির জন্য নির্দিষ্ট ভাবে সব সম্প্রদায়ের মত নেওয়া হোক। আমরা শুধু বলছি সব সম্প্রদায়ের যখন নিজস্ব বিধিবদ্ধ পারিবারিক আইন আছে, মুসলিমদের থাকবে না কেন?’’

সম্প্রতি এই শহরেই সমাবেশ করে ল বোর্ড বলে গিয়েছে, তিন তালাকের অধিকার রাখতেই হবে। নতুন মহিলা শাখা খুলেও সেই কথার পুনরাবৃত্তি করিয়েছে তারা। তা হলে?

জাকিয়া বললেন, ‘‘ল বোর্ডের খপ্পরে থাকা মহিলাদের দিয়ে যা বলানো হচ্ছে, সেটা সাধারণ মুসলিম মহিলাদের বক্তব্য নয়।’’ সেই মঞ্চেই হাজির থেকে তিন তালাকে সায় দিয়েছে এখানকার শাসক দল। জাকিয়ার মন্তব্য, ‘‘মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এই অবস্থান দুর্ভাগ্যজনক। সাধারণ মহিলাদের ধারণা কিন্তু বদলাচ্ছে!’’

বিজেপি-প্রভাবিত একটি সংগঠনের আহ্বানে কলকাতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। রাজনৈতিক তাগিদে নুরজাহানদের সেলাম জানিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বা রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতো বিজেপি নেতারাও। কিন্তু ‘জেহাদি’ তিন কন্যা শুধু বলছেন, ‘‘কাজের কাজটা সংসদ করে দেখাক! তা হলেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন