গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
সকালে দিল্লির সংসদ চত্বরে শুরু হয়েছিল ‘ঠুমকা’ মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচি। বেলা গড়াতেই সেই বিতর্কের আঁচ পড়ল বাংলার বিধানসভাতেও। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নারীবিদ্বেষের অভিযোগ আনলেন তৃণমূলের মহিলা বিধায়কেরা। মন্ত্রী শশী পাঁজা বললেন, মহিলাদের বার বার অপমান করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। তবে তাঁর এই মন্তব্য শোনার পরেই পাল্টা প্রতিবাদ জানান বিজেপির বিধায়কেরা। অধিবেশনের মাঝেই তীব্র তরজা শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে।
তৃণমূলের অভিযোগ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়কে লক্ষ্য করে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ। মঙ্গলবার কলকাতা চলচ্চিত্রোৎসবের উদ্বোধন হয়েছে। সেখানেই উপস্থিত বলিউড অতিথিদের অনুরোধে মমতার একটি সৌজন্যমূলক আচরণকে ‘ঠুমকা’ বলে কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ। বুধবার সকালে সংসদের অধিবেশনের ফাঁকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গিরিরাজ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য দুনিয়ায় রয়েছেন। বাংলায় যখন গরিবের অধিকার কেড়ে নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে, তখন উনি ঠুমকা লাগাচ্ছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। উচিত নয়।’’ গিরিরাজের এই মন্তব্যেই চটেছে বাংলার শাসকদল। তাদের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেনেবুঝে এই অপমান করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি এক জন ঘোরতর নারীবিদ্বেষী।
প্রসঙ্গত, ‘ঠুমকা’ নৃত্যশৈলীর একটি মুদ্রা। তবে তা সাধারণত খুব ‘প্রশংসাসূচক’ অর্থে প্রয়োগ করা হয় না। সেই সূত্রেই গিরিরাজের মন্তব্য শুনে অনেকের মনে হয়েছে, মমতাকে তির্যক আক্রমণ করতেই এ হেন শব্দ ব্যবহার করেছেন নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার এই সদস্য।তবে চলচ্চিত্রোৎসবে সে দিন কী হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। গিরিরাজের মন্তব্য নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, ‘‘আমি নাচ জানি না। আমি আদিবাসীদের সঙ্গে নাচি। ওঁদের সমর্থন করার জন্য। এখানে (চলচ্চিত্র উৎসবে) সে সব হয়নি।’’ এর পরেই তিনি হেসে বলেন, ‘‘অনিল কপূরজি আমায় হাত ধরে টানলেন। আমরা বলিউডকে সম্মান করি। এটা ছিল সম্মান প্রদর্শন। আর কিছু না।’’
মমতার এই সম্মান প্রদর্শনকেই অবশ্য ‘ঠুমকা’ বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ। শুধু তা-ই নয়, ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে নিজের শরীরও দোলাচ্ছেন গিরিরাজ। আর এর পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্য গিরিরাজের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের মহিলা নেতা এবং মন্ত্রীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে দিল্লিতে তৃণমূলের মহিলা সাংসদেরা সংসদ চত্বরে গিরিরাজের বহিষ্কারের দাবিতে ধর্নায় বসেন। তার পরেই বিধানসভায় শুরু হয় এ নিয়ে বিক্ষোভ। বিধানসভায় মেনশন পর্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক শশী। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এ বিষয়ে বলার অনুমতি চান শশী। স্পিকার অনুমতি দিলে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বরাবরই মহিলাদের অপমান করে এসেছেন। এমন বহু উদাহরণ এর আগেও পাওয়া গিয়েছে। আর বুধবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে অত্যন্ত অপমানজনক মন্তব্য এবং অঙ্গভঙ্গি করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ।’’ শশীর এই কথারই তীব্র প্রতিবাদ জানান বিজেপির বিধায়কেরা। বিধানসভার অধিবেশনের মধ্যেই শাসক এবং বিরোধী দলের বিধায়কদের মধ্যে শুরু হয় তরজা।