ছবি এএফপি।
ইউরোপ-সহ একাধিক দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) শুরু হয়েছে। আর তাতেই সাময়িক ভাবে কমার পরে ফের বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমিতের সংখ্যা। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সেই ‘সন্ধিক্ষণে’ দাঁড়িয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতও। কারণ, দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর সময় এবং পুজোর মরসুম, দুইয়ের সমাপতন!
দেশের কোনও কোনও জায়গায় দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে বলে গত মাসেই সতর্ক করেছিল ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পলও পুজোয় নিয়ম না মানলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথাই সম্প্রতি বলেছেন। ফলে এক দিকে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ, অন্য দিকে পুজোর ভিড়ের আতঙ্ক— এই দুইয়ের আঁতাঁতে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে কতটা চাপ আসতে চলেছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা।
‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর (আইসিএমআর) এক গবেষকের কথায়, “দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাবল্য কতটা হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।’’ আইসিএমআর-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারা বিশ্বেই করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়েছে। ভারতেও তা শুরু হচ্ছে। একই সঙ্গে পুজো এসে গিয়েছে। ফলে এই দুই কারণে দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তে চলেছে। এমন অবস্থায় শুধু বাড়ির বাইরেই নয়, বাড়ির ভিতরেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’’
আরও পড়ুন: মণ্ডপ ফাঁকা, তবু ভাটা নেই ঠাকুর দেখার উৎসাহে
তবে যতই প্রচার করা হোক না কেন, পুজোয় দূরত্ব-বিধি কতটা মানা হবে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বলে জানাচ্ছেন অনেকে। দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এল এম শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘‘মাস্ক পরতেই হবে। যেখানে দূরত্ব-বিধি বজায় রাখা যাচ্ছে না, সেখানে আরও বেশি সতর্ক থেকে মাস্ক পরতে হবে। এর পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাত পরিষ্কার করে যেতে হবে। এ জন্য বাড়ি থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার নিয়ে বেরোতেই হবে।’’
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বেশি উদ্বিগ্ন পুজোর পরে রোগীর সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাবে এবং তা কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নিয়ে। কারণ, হাসপাতালের শয্যার উপরে ইতিমধ্যেই প্রবল চাপ পড়েছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সংক্রমিতের সংখ্যা তো এখনই বাড়তে শুরু করেছে। এ জন্য পুজো শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না!’’ মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, নিয়ম পালনে শিথিলতা এলে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিণতি কী হতে পারে, তা ইউরোপের দেশগুলির তথ্য দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: যাত্রী নেই, কমে যাচ্ছে লন্ডনের উড়ান
তাঁর কথায়, ‘‘এ দেশেও কিন্তু একই পরিস্থিতি হতে চলেছে। কারণ, এত দিন নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে জনসাধারণের একটা অংশ রাস্তায় যে ভাবে ঘোরাফেরা করেছেন, তাতে পুজোয় মানুষ নিয়ম মানবেন, এটা কষ্টকল্পনা মাত্র।’’