প্রায় অর্ধেকটাই নিরুদ্দেশ! সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বুঝে উঠতে পারছে না, ১১০০ কোটি টাকা কী ভাবে খরচ হয়েছে। ঝাঁপ গুটানোর আগে পর্যন্ত সারদা বাজার থেকে অন্তত ২৪০০ কোটি টাকা তুলেছিল।
দিন কয়েক আগে দিল্লি থেকে ইডি-র এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের তদন্ত শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু ওই ১১০০ কোটির হিসেব এখনও অজানা। সারদা-কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জেরা করেও তার হদিস মেলেনি। এমনকী, খোদ সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন বা তাঁর ‘ছায়াসঙ্গিনী’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। সারদা-কাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষ বা আরও কেউ কেউ অবশ্য দাবি করছেন, সারদা থেকে বেশ কিছু লোক টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সে সংক্রান্ত পাকা কোনও তথ্য-প্রমাণ তাঁরা দিতে পারেননি, ইডি-ও তা খুঁজে পায়নি।
প্রসঙ্গত, এর আগে হর্ষদ মেটার শেয়ার কেলেঙ্কারি বা সত্যম মামলার মতো বিবিধ আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে মোট অর্থের একটা বিশাল অংশের হিসেব শেষমেশ অধরাই রয়ে গিয়েছে। সারদা-কাণ্ডের ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে বলে ইতিমধ্যে আশঙ্কা করতে শুরু করেছেন তদন্তকারীদের একাংশ।
এমতাবস্থায় ইডি চাইছে শান্তিনিকেতনের কোপাই রিসর্ট বা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিষ্ণুপুরের জমির মতো সারদা’র যত সম্পত্তির হিসেব এ পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, যত শীঘ্র সম্ভব সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে ফেলতে। তাই ইডি-অফিসারেরা এখন রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন কখনও যাচ্ছেন শিলিগুড়ি, কখনও মালদহ, কখনও হানা দিচ্ছেন লাটাগুড়িতে। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নোটিস লিখে বড় বড় বোর্ড বানিয়ে নেওয়া হচ্ছে, মৌজা-খতিয়ান-দাগ নম্বরের উল্লেখ করে। জায়গায় জায়গায় সারদার জমি চিহ্নিত করে সেখানে সেই বোর্ড পুঁতে দেওয়া হচ্ছে। নোটিসের প্রতিলিপি যাচ্ছে স্থানীয় থানাতেও।
এ সব করতে গিয়ে কোথাও সাধারণ মানুষের বাধা বা প্রতিবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে না?
ইডি অফিসারেরা বরং উল্টো কথা বলছেন। “লোকজন তো দেখছি সাহায্য করতেই এগিয়ে আসছেন! জমি খোঁজার সময়ে অনেকে আবার আঙুল তুলে চিনিয়ে দিচ্ছেন, ওই যে, ওটা সারদার জমি। কিংবা, ওই যে সারদার বাড়ি।” জানাচ্ছেন এক তদন্তকারী। ওঁদের মতে, এ সবই হল সারদায় টাকা রেখে প্রতারিত হওয়ার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ইডি-কর্তাদের আশা, চলতি মাসের মধ্যে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পর্ব সেরে ফেলা যাবে। সল্টলেকে সুদীপ্ত সেনের দু’টো বাড়িও তালিকায় রয়েছে। সারদার মিডল্যান্ড পার্কের অফিসটি বাজেয়াপ্ত করার নোটিস ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।
এগুলো নিয়ে কী হবে?
ইডি-সূত্রের ব্যাখ্যা: বাজেয়াপ্ত করা ওই সব সম্পত্তি নিলাম করা হবে। যা টাকা উঠবে, তা পাঠানো হবে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরে। পরে আদালতের নির্দেশে বা কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে তার থেকে সারদার প্রতারিত আমানতকারীদের ক্ষতি পূরণ করা হতে পারে।
স্বয়ং সুদীপ্ত সেনও চান, তাঁর সম্পত্তি নিলাম করে আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। অন্তত জেরার মুখে সারদা-কর্তা একাধিক বার তেমনই ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।