অবহেলা: যত্রতত্র পড়ে রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। ফাইল চিত্র।
কথা ছিল ভোল বদলে যাবে ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানার। বহর বাড়বে, গড়ে উঠবে উন্নত পরিকাঠামো। কিন্তু দু’বছরেও সেই ‘জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক’-এর কাজ শেষ হয়নি। ফলে, শীতের মরসুমে চিড়িয়াখানায় গিয়ে হতাশ হচ্ছেন পর্যটকরা।
রাজ্যে পালাবদলের পরে ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানার সম্প্রসারণ ঘটিয়ে ২৩ হেক্টর এলাকা জুড়ে জুলজিক্যাল পার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। শালবনের মাঝে চিড়িয়াখানার ‘জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক’ নামকরণ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী চিড়িয়াখানা সম্প্রসারণে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ এবং স্টেট জু-অথরিটি প্রথম পর্যায়ে ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করে। ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী সেই কাজের শিলান্যাসও করেন। তারপর প্রায় দু’বছর হতে চলল, কিন্তু এখনও কাজ শেষ হয়নি।
ইতিমধ্যে চিড়িয়াখানায় সুদৃশ্য মূল গেট ও টিকিটঘর তৈরি হয়েছে। কিন্তু ইলেকট্রিক ওয়্যারিংয়ের কাজ বাকি থাকায় নতুন টিকিট ঘর চালু হয়নি। নতুন মূল গেটও বন্ধ। পুরনো দরজা দিয়েই দর্শকদের ঢুকতে হচ্ছে। ভেতরে কোথাও পড়ে রয়েছে পাথর-বালি, কোথাও আবার পড়ে ইট। সে সব সামলেই পা ফেলতে হচ্ছে দর্শকদের। অভাব রয়েছে প্রাণী চিকিৎসক ও কর্মীরও। এই চিড়িয়াখানায় প্রায় চারশো বন্যপ্রাণী রয়েছে। অথচ একজনও স্থায়ী প্রাণী চিকিত্সক নেই। স্থায়ী অধিকর্তা-সহ ৬৪টি পদের অধিকাংশও শূন্য। অধিকর্তার বাড়তি দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ঝাড়গ্রামের ডিএফও। আর কর্মী রয়েছে জনা দশেক। কর্মী ও প্রাণী চিকিত্সকের অভাবে পশু হাসপাতাল ও চিড়িয়াখানার প্রশাসনিক ভবন তৈরি হলেও চালু হয়নি। ফলে, রাতবিরেতে বন্যপ্রাণী অসুস্থ হলে সমস্যায় পড়েন কর্তৃপক্ষ।
এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে কয়েকশো চিতল হরিণ, কয়েকটি স্বর্ণমৃগ, রকমারি পাখি, নীলগাই, এমুপাখি, নেকড়ে, হায়না, ভালুক, হাতি। এ ছাড়া রয়েছে নানা ধরনের সাপ, কুমির, কচ্ছপ ইত্যাদি। সে সবের টানে ঝাড়গ্রামে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা এখানে ভিড় জমাচ্ছেন। হতাশও হচ্ছেন। চিতাবাঘ ‘সোহেল’ এখনও সঙ্গিনী বিহীন। দর্শকদের বিশ্রাম নেওয়ার কংক্রিটের ছাতা-সহ বসার জায়গাও সংস্কারের অভাবে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। তৈরি হয়নি পাখিদের নতুন এনক্লোজার।
কলকাতার প্রতিমা রায়, নন্দন গোস্বামী, পুণ্যশ্লোক রাঢ়ীদের কথায়, “প্রাকৃতিক শালবনের মাঝে এত সুন্দর চিড়িয়াখানাটিকে ভাল ভাবে সাজিয়ে তোলা প্রয়োজন।”
রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার দাবি, ঠিকাদারদের গড়িমসিতেই প্রকল্পের কাজে দেরি হচ্ছে। তবে সূত্রের খবর, চিড়িয়াখানার স্থায়ী অধিকর্তা না থাকায় নজরদারির কাজ ঠিকমতো এগোচ্ছে না। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনও বলেন, “বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আপাতত অস্থায়ীভাবে সরকারি প্রাণী চিকিৎসকদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।”