গত পঞ্চায়েত ভোটে পুলিশকে ‘বোম’ মারতে বলার হুমকি-মামলায় সদ্য তিনি বেকসুর খালাস হয়েছেন। এ বার আগামী পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী প্রার্থী থাকবে না বলে হুঙ্কার ছাড়লেন দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল।
এই হুঙ্কারের পিছনে অবশ্য একটি ‘অশ্বত্থামা হত, ইতি গজ’ মার্কা ব্যাপার আছে। বৃহস্পতিবার সিউড়িতে তৃণমূলের মহিলাকর্মীদের সম্মেলনে অনুব্রত বলেছেন, ‘‘উন্নয়নের স্বার্থে আগামী পঞ্চায়েত ভোটে অন্য দলের প্রার্থী থাকবে না। থাকবে শুধুমাত্র মা-মাটি-মানুষের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল— তৃণমূল।’’ যা জেনে বিরোধীদের প্রশ্ন, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য হাতে এখনও এক বছর। তবে কি এখন থেকেই তার মহড়া শুরু করে দিলেন অনুব্রত? ভোটে প্রতিপক্ষ দলকে মনোয়ন তুলতে না দেওয়ার প্রচ্ছন্ন হুমকিই আগে দিয়ে রাখলেন বীরভূমে শাসকদলের সভাপতি, অভিযোগ বিরোধী শিবিরের।
এ বছর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কলেজে ভোটে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলিকে মনোনয়ন তুলতে-জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। বেশির ভাগ কলেজে বিরোধীদের দেখা না মিললেও সংঘর্ষে জড়াতে দেখা যাচ্ছে টিএমসিপিরই নানা গোষ্ঠীকে। বীরভূমের ১৬টি কলেজের কোথাওই তৃণমূলের বাধায় বিরোধী সংগঠনগুলি মনোনয়ন তুলতে পারেনি বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। অনুব্রত তখনই বলেছিলেন, ‘‘এটা পঞ্চায়েত ভোটের ট্রেলার! এই মডেলেই পঞ্চায়েত
ভোট হবে।’’
অনুব্রতর সেই ‘মডেল’ কি তবে বিরোধীদের ভোটে মনোনয়নই তুলতে না দেওয়া? ঘটনা হল, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে বীরভূমে এক তরফা ভোট করানোর অভিযোগ উঠেছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, বীরভূমের ৪২টি জেলা পরিষদ আসন, ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১৬৭টি পঞ্চায়েতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখলই যে একমাত্র লক্ষ্য— সেটাই এ দিন সিউড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে স্পষ্ট করেছেন অনুব্রত ওরফে কেষ্ট। যেহেতু ৫০ শতাংশ আসনে লড়বেন মহিলারা, তাই তাঁদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত— তা বুঝিয়ে দিতে এ দিন কয়েক হাজার মহিলা কর্মীর সামনে তাঁরা চেনা মেজাজ তুলে ধরলেন তিনি। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর দাবি, ‘‘আমি তা বলিনি। আমার দায়িত্বে থাকা ১৪টি বিধানসভা (বীরভূম ১১ ও বর্ধমানের ৩) এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে, তা দেখে বিরোধীরা আর দাঁড়াবেন না—এটাই বলতে চেয়েছি।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলছেন, ‘‘বিরোধীরা যে ভোটে লড়বেন না, সে কথা অনুব্রতকে জানিয়েছেন নাকি? কী উন্নয়ন হয়েছে, তা অনুব্রতদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। উন্নয়নের ফল তো এখন জেল হাজত!’’ তাঁর অভিযোগ, সাম্প্রতিক কলেজ ভোটের মতোই মেরে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা করতে বাধা দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটে জেতাই অনুব্রতদের ‘মডেল’। এই হুমকিকে বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ বীরভূমের তরুণ কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে দলই জিতুক, জনপ্রতিনিধি উন্নয়নের কাজ করবেন— এটাই গণতন্ত্রের স্বাভাবিক সুর। কিন্তু, অনুব্রতরা যে মডেলের কথা বলছেন, তা গণতন্ত্রের পক্ষে কতটা বিপজ্জনক তা মানুষ জানেন। তাঁদের উপর আস্থা আছে।’’