মহালয়ার আগে রেডিয়োয় বুঁদ শওকত

দুপুরের খাবার খেতে খেতে বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরছেন রাতদুপুরে। গিন্নির মুখ বেজার, ‘‘বলি, এমন করলে কি শরীর টিকবে?’’  দিনভর খাটনি শেষেও কর্তার মুখে তৃপ্তির হাসি, ‘‘এই তো সিজ়ন গো! মহালয়ার পর থেকেই রুটিনে ফিরব!’’

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৬
Share:

ব্যস্ত: চলছে রেডিয়ো মেরামতি। বেলডাঙায়। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

সাতসকালে ঘুম থেকে উঠেই ছুটছেন তিনি। কী ব্যাপার? চলন্ত সাইকেল থেকে ছিটকে আসে, ‘‘সামনে মহালয়া!’’

Advertisement

দুপুরের খাবার খেতে খেতে বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরছেন রাতদুপুরে। গিন্নির মুখ বেজার, ‘‘বলি, এমন করলে কি শরীর টিকবে?’’ দিনভর খাটনি শেষেও কর্তার মুখে তৃপ্তির হাসি, ‘‘এই তো সিজ়ন গো! মহালয়ার পর থেকেই রুটিনে ফিরব!’’

রবিবার বিকেলে নিজের দোকানে বসে বছর বাহান্নর শওকত আলি বলছেন, ‘‘নেই নেই করে গোটা তিরিশেক নতুন রেডিয়ো বিক্রি করেছি। এখনও গোটা তিনেক সারাতে বাকি। বাবুরা এলেন বলে!’’ বেলডাঙা বাজারে ছোট্ট দোকান শওকতের। বছর তিরিশেক আগে তিনি রেডিয়ো মেরামতির কাজ শিখে এই দোকান খুলেছেন। প্রথম দিকে একচেটিয়া রেডিয়োরই কারবার ছিল। পরে জায়গা করে নিয়েছে টিভি, রিমোট, সেট টপ বক্স, ইমার্জেন্সি লাইট।

Advertisement

বছর কয়েক আগেও বেলডাঙার বেশ কয়েকটি রেডিয়োর দোকান রমরমিয়ে চলত। ‘রেডিয়ো মহল’, ‘রেডিয়ো জগৎ’, ‘রেডিয়ো ঘর’-এর কথা আজও মুখে মুখে ঘোরে। তবে দোকানের নাম বদলে সেই ব্যবসায়ীদের অনেকেই টিভি, সেট টপ বক্সের কারবার করছেন। ব্যতিক্রম শুধু শওকত। সময়ের প্রয়োজনে দোকানে অন্য সামগ্রী যোগ করেছেন। কিন্তু রেডিয়োকে তিনি ছাড়েননি। রেডিয়ো-ও তাঁকে বঞ্চিত করেনি।

যাঁরা বাড়িতে বছরের বেশির ভাগ সময় রেডিয়ো ফেলে রাখেন, সেই তাঁরাও মহালয়ার আগে রেডিয়ো নিয়ে হইচই শুরু করেন। কোনওটাতে ব্যাটারির দম শেষ, কোনওটার উড়ে গিয়েছে সার্কিট। সব মেরামতি করে দিতে হয় এই সময়। এ বারেই তিনি প্রায় পঞ্চাশটি রেডিয়ো সারিয়েছেন। শওকতও কবুল করছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে বছরের এই সময়টাতেই সবথেকে বেশি রোজগার হয়।’’

কিন্তু টিভি-মোবাইল-ফোর জি জমানাতেও লোকে রেডিয়োয় মহালয়া শোনেন?

হাতের তাতালটাকে যথাস্থানে রেখে শওকত বলছেন, ‘‘আলবাত শোনেন। আর কারা শোনেন, শুনবেন? যাঁরা রেডিয়ো সারাতে দিয়েছিলেন এবং যাঁরা নতুন
রেডিয়ো কিনেছেন তাঁদের অনেকেই মুসলমান। ফি বছর তাঁরাও মহালয়া শুনবেন বলেই রেডিয়ো সারাতে দেন এবং কেনেন।’’

বেলডাঙার ইয়ার আলি শওকতের দোকানে এসেছিলেন রেডিয়ো নিতে। তিনি বলছেন, ‘‘মহালয়া শোনার আবার জাত-ধর্ম হয় নাকি! ছেলেবেলায় বাবার সঙ্গে এই অনুষ্ঠান শুনতাম। এখন ভোরে উঠে আমার ছেলেদের সঙ্গে বসে শুনি।’’ হাতের কাজ শেষ। এ বার বাড়ি ফিরবেন শওকতও। তাঁর হাতেও একটা রেডিয়ো। শওকত হাসছেন, ‘‘শরতের ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মহিষাসুরমর্দিনী শুনলে মনটাই ভাল হয়ে যায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন