দূষণরোধে লক্ষ্যভেদ কি হবে অর্জুনের

সময় গড়িয়েছে। ওই মামলার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট গত বছর রায় দিয়েছিল, শুধুমাত্র রাত ৮টা থেকে ১০টা, এই দু’ঘণ্টা বাজি ফাটানো যাবে। দিল্লির ক্ষেত্রে তা শুধুমাত্র গ্রিন বাজি। তা হলে কি লড়াইয়ে খুদেরা সফল?

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪৪
Share:

দেদার বিক্রি হচ্ছে শব্দবাজি। ফাইল চিত্র

অর্জুন গোপাল, আরভ ভাণ্ডারি এবং জ়োয়া রাও ভাসিন। প্রথম দু’জনের বয়স ছ’মাস। তৃতীয় জনের চোদ্দ মাস। দীপাবলির সময়ে দূষণ রুখতে চার বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল এই তিন খুদে! আদালতে জমা পড়া আবেদনে তাদের তরফে লেখা হয়েছিল, ‘সুস্থ বাতাসে শ্বাস নিতে চাই।’ দাবি ছিল, নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়ার যে অধিকার ভারতীয় সংবিধান দিয়েছে, তা নিশ্চিত করুক দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

Advertisement

সময় গড়িয়েছে। ওই মামলার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট গত বছর রায় দিয়েছিল, শুধুমাত্র রাত ৮টা থেকে ১০টা, এই দু’ঘণ্টা বাজি ফাটানো যাবে। দিল্লির ক্ষেত্রে তা শুধুমাত্র গ্রিন বাজি। তা হলে কি লড়াইয়ে খুদেরা সফল?

বর্তমানে অর্জুনের বয়স সাড়ে চার বছর। তার বাবা আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ দিল্লি থেকে বললেন, ‘‘পুলিশ ও প্রশাসন শুধুমাত্র অনুমোদিত বাজি বাজারে বিক্রি হওয়া নিশ্চিত করলে আমরা অনেকটাই সন্তুষ্ট। কিন্তু তা হচ্ছে কত টুকু, সেটাই আসল প্রশ্ন।’’ আর এক খুদে আবেদনকারী আরভের বয়সও এখন সাড়ে চার। তার বাবা আইনজীবী অমিত ভাণ্ডারির কথায়, ‘‘দু’এক পা এগিয়েছি মাত্র। গন্তব্যে পৌঁছতে পারিনি। অনেক কাজ বাকি।’’

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়কে বাজিবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে মনে করেন পরিবেশকর্মীরা। আর তা সম্ভব হয়েছিল অর্জুন, আরভ ও জ়োয়ার তরফে করা ওই আবেদনের কারণেই! সন্তানেরা এখন কেমন আছে? ‘‘এ শুধু আমাদের সন্তানদের ব্যাপার নয়। শুধু দিল্লিরও নয়, গোটা দেশের শিশুদের স্বার্থের সঙ্গে এই আবেদন জড়িত। ওই তিনজন আমার, আপনার, গোটা দেশের প্রতিনিধি,’’ বলছেন অমিত। আর গোপাল বলছেন, ‘‘ওদের, আমাদের আর বাকি সকলের ভাল থাকার জন্য এখন মাস্ক, এয়ার পিউরিফায়ার আর দিন বদলের আশাটুকুই সম্বল।’’

বাজি পোড়ানোর নিয়ম

• নির্ধারিত সময় রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা

• সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল

অভিযোগ জানাতে

রাজ্য পুলিশ কন্ট্রোল রুম

২২১৪-৫৪৮৬

কলকাতা পুলিশ কন্ট্রোল

২২১৪-৩২৩০/ ১০০

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ

২৩৩৫-৮২১২/৩৯১৩

১৮০০-৩৪৫-৩৩৯০ (টোল ফ্রি)

(বিকেল ৫টা থেকে রাত ১২টা)

সবুজ মঞ্চ

৯৮৩১৩১৮২৬৫

৯৪৩২২০৯৭৭০

অমিত, গোপালেরা তাঁদের সন্তানদের হয়ে (বাই অ্যান্ড অন বিহাফ অব) যে আবেদন জমা দিয়েছিলেন, তাতে বিভিন্ন সমীক্ষা ও রিপোর্ট উল্লেখ করে দেখানো হয়েছিল, কী ভাবে বাতাসের মানের অবনমন শিশু থেকে বয়স্ক, সকলের স্বাস্থ্যের উপরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কী ভাবে দূষিত বাতাস ভিতরে গিয়ে লণ্ডভণ্ড করে দেয় স্বাভাবিক শারীরিক কাঠামোকে। কী ভাবে প্রতি বছর দিল্লিতে
প্রায় সাত লক্ষ মানুষ শ্বাসনালী সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগে ভুগে মারা যান। আবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, ‘উৎসবের নামে এই নতুন গিমিক (বাজি ফাটানো) শুধুমাত্র আমাদেরই নয়, আমাদের সন্তান এবং যারা এখনও জন্মায়নি তাদের জীবনের ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক।’

তার পরও অবশ্য তাণ্ডব থামেনি। দিল্লির মতো কলকাতারও একই অবস্থা। বরং শীতকালে দূষণের নিরিখে দিল্লিকেও টেক্কা দেয় কলকাতা। যে দূষণ কয়েক গুণে বেড়ে যায় কালীপুজো, দীপাবলিতে। কলকাতায় দূষণ প্রসঙ্গে অমিত বললেন,
‘‘এটা শুধু আদালতের কাজ নয়। মানুষকে বুঝতে হবে কোনটা ঠিক, কোনটা নয়। কী বাতাস সন্তানদের জন্য রেখে যাচ্ছি, তা ভাবতে হবে। এখনই। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।’’ গোপালের কথায়, ‘‘আমাদের বুঝতে হবে, এই বাজিতে কী ভাবে বাচ্চাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা বাতাস থেকে অক্সিজেনের বদলে বিষ গ্রহণ করে!’’

এই কারণেই হয়তো কলকাতায় ভরা সাংবাদিক বৈঠকে কিছুটা বিপন্ন শুনিয়েছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের গলা। ‘‘বাজি ফাটালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় আমাদের পরিবার, আমাদের সন্তানদের। তা আমরা বুঝব না? আমার বাচ্চারা কোন বাতাসে শ্বাস নেবে, তা এক বারও ভাবব না?’’

অমিতও বলেন, ওই তিন খুদে আসলে বাকি সকলের প্রতিনিধি, যারা সুস্থ বাতাসে শ্বাস নিতে চায়। আগামী প্রজন্মের জন্য
সুস্থ পরিবেশ চায়। আর সেই ইচ্ছের সূত্রে এক হয়ে যায় কলকাতা থেকে দিল্লি!

এ বছর ইচ্ছে পূরণ হবে কি? বোঝা যাবে। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন