সরকারি হাসপাতাল ঠিক মতো চিকিৎসা না করেই ফিরিয়ে দিচ্ছে জ্বরের রোগীকে। পরে রোগীর এতটাই অবনতি হচ্ছে যে বাঁচানো যাচ্ছে না। কলকাতার দু’টি সরকারি হাসপাতালে মৃত তিন রোগীর পরিবারের অভিজ্ঞতা এমনই।
নিউটাউনের রিয়া সরকার (১৯), রাজারহাটের সুমন দে (৩৫) এবং দেগঙ্গার বাসিন্দা সাহেনুর বিবির (৪৮) পরিবারের অভিযোগ, ওই দুই হাসপাতাল রোগীর শারীরিক অবস্থাকে প্রথমে আমল দিতে চায়নি।
আরও পড়ুন: জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা, দেরিতে বিপদ
রিয়ার পরিবারের অভিযোগ রক্ত পরীক্ষায় এনএসওয়ান পজিটিভ হওয়ায় ১০ নভেম্বর তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আউটডোরে কিছু ওষুধপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। রবিবার সন্ধ্যা থেকে ফের জ্বর আসে। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। শুরু হয় পেট ব্যথা, ডায়েরিয়া। সোমবার সকালে ফের আইডি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রিয়ার মামার অভিযোগ, ‘‘প্রথমেই চিকিৎসকেরা গুরুত্ব দিলে এ ভাবে মেয়েটাকে মরতে হতো না।’’
সুমন দে-র মৃত্যুর জন্যও তাঁর পরিবার আইডি হাসপাতালের সমালোচনায় মুখর। তাঁদের অভিযোগ ওই হাসপাতাল এনএসওয়ান পজিটিভ সুমনের ডায়েরিয়ার চিকিৎসা করে ছেড়ে দেয়। বাড়ি ফিরে এসে অবস্থা জটিল হলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই রবিবার রাতে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। প্রথমেই ঠিকমতো চিকিৎসা হলে সুমনকে বাঁচানো যেত বলে পরিবারের দাবি।
দেগঙ্গার সাহেনুরকে সুস্থ বলে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেছিলেন আরজিকর-এর চিকিৎসক। সাহেনুরের পরিবার সূত্রে দাবি, হাসপাতালের চিকিৎসক কর্মীদের হাতে-পায়ে ধরলেও ভর্তি নেওয়া হয়নি। হাসপাতাল চত্বরেই থেকে যায় পরিবারটি। রবিবার সকালে শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। তখন ভর্তি করেও বাঁচানো যায়নি ওই গৃহবধূকে। দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আর স্বাস্থ্য ভবন মামলা চলছে বলে উত্তর এড়িয়ে গিয়েছে।
এদিন রাজ্যে জ্বরে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্ধমানের যমুনা ঘোষ মারা যান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ রয়েছে। আরজিকর হাসপাতালে মারা গিয়েছেন দমদম রোডের ৪৫ বছরের কিরণ জয়সোয়ারার। কাশির সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু বলে লেখা হয়েছে ডেথ সার্টিফিকেটে। উত্তর ২৪ পরগনার গুমার ৮৬ বছরের বৃদ্ধ পরিতোষ সরকারের মৃত্যু হয়েছে বারাসতের নার্সিংহোমে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে মাল্টি অর্গান ফেলিওর।