ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে গিয়েছে ঘরের চাল (বাঁদিকে)। ডানদিকে, বাড়ির উপরে ভেঙে পড়েছে গাছ। বুধবার ছবি তুলেছেন সুব্রত জানা।
সাকুল্যে স্থায়ীত্ব মিনিট তিনেক। কিন্তু সেটুকু সময়ের মধ্যেই প্রায় তিনশো বাড়ি ভেঙে, শ’তিনেক গাছ উপড়ে ফেলে ধ্বংসের চিহ্ন রেখে চলে গেল সে।
মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ প্রবল ঝড়ে হাওড়ার পাঁচলার চড়া পাঁচলা এলাকায় বুধবার সকালে গিয়ে দেখা গেল এমনই ছবি। বটতলা, বাদামতলা ও তার আধ কিলোমিটার মধ্যে এলাকা দেখলে মনে হবে যেন মত্ত হাতির পাল চলে গিয়েছে সেখান দিয়ে। ঝড়ে কোথাও ঘর চাপা পড়ে, কোথাও গাছের ডাল ভেঙে জখম হয়েছেন ৮ জন। তাঁদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের দাবি, সাইক্লোন ধরনের ঝড় বয়ে গিয়েছে ওই এলাকার উপর দিয়ে।
বুধবার ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি দেখতে পাঁচলার বিডিও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আব্দুল জলিল ঘটনাস্থলে যান। বিডিও বলেন, ‘‘অন্তত ২০০টি বাড়ি ভেঙেছে। এর মধ্যে প্রায় ২০টি বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কমপক্ষে ৬০টি পরিবারের ক্ষতি হয়েছে। পঞ্চাশের উপর পরিবারকে পাশের বাড়িতে বা অন্যত্র সরানো হয়েছে। দুর্গতদের ১০০টি ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ত্রাণ দেওয়ারও চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসনকেও সব জানানো হয়েছে।’’ দুর্গতদের জন্য ইতিমধ্যেই তিনটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একে ঝড়ের তাণ্ডব, তার উপর নাগাড়ে বৃষ্টিতে ঘরে থাকাই দুষ্কর হয়ে গিয়েছে। বহু বাড়ির টালির চাল ভেঙে যাওয়ায় বৃষ্টির জলে ঘর ভাসছে। তার উপর ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত। এজ হারুল শা নামে এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ঘরে বসে জরির কাজ করছিলাম। হঠাৎই গোঁ গোঁ একটা আওয়াজ শুনে বাইরে এসে দেখতে যাই কী হচ্ছে। চোখের পলক ফেলার আগেই দেখি ঘরের চালের উপরে ভেঙে পড়ছে গাছ। চোখের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড় ঘরের টালির চাল। কোনওরকমে প্রাণে বেঁচেছি। হাফিজা খাতুন নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘ঝড়ের মধ্যেই টালির চাল ভেঙে পড়ছে দেখে ছেলেমেয়েকে নিয়ে খাটের তলায় ঢুকে পড়ি। পরে ঝড় থামলে বৃষ্টির মধ্যে ত্রিপলের নীচে সারারাত কেটেছে।’’ ব্লক প্রশাসন থেকে তত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানানো হলেও দুর্গতদের অনেকেরই অভিযোগ তাঁদের কাছে কোনওরকম ত্রাণ পোঁছয়নি।