TMC Doctors

আদি নেতাদের কাজে খুশি নন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব, শাসকের নয়া চিকিৎসক সংগঠনে তাই ‘নতুন মুখ’

আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় তৃণমূলের আদি চিকিৎসক নেতারা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে দলের অন্দরেই অভিযোগ উঠেছিল। তখন দলের চিকিৎসক নেতারা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৩২
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আরজি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। আন্দোলনের জেরে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়েছিল বাংলার শাসক তৃণমূল। তখন দলের ‘আদি’ চিকিৎসক নেতারা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে দলের অন্দরেই অভিযোগ উঠেছিল। সেই ‘কঠিন’ সময়ে দলের চিকিৎসক নেতারা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন, যা নিয়ে ব্যক্তিগত মহলে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তখন থেকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে নতুন সংগঠন তৈরির সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সিদ্ধান্ত হয়, আর পুরনোদের ওপর আস্থা নয়, নতুন চিকিৎসক নেতাদের তুলে আনতে হবে সংগঠনের নেতৃত্বে। বর্তমানে তৃণমূলে ১৪ জন চিকিৎসক-বিধায়ক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বাছাই তিন জনকে চিহ্নিত করেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

আরজি কর সঙ্কটের সময়ে দলের চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা যেমন সাংগঠনিক ভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন, তেমনই পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে প্রকাশ্যে দলকে অস্বস্তিতেও ফেলেছিলেন। তাই নির্মলকে নতুন সংগঠনে জায়গা দেওয়া হলেও তাঁকে সে ভাবে ‘গুরুত্ব’ দেওয়া হচ্ছে না। সে কথা সম্যক বুঝেই সোমবার সাংবাদিক বৈঠকেও হাজির হননি তৃণমূলের এই চিকিৎসক-বিধায়ক। সুদীপ্ত-কাশেমদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। আপাতত পুরনো চিকিৎসক নেতাদের সরিয়ে তৃণমূল নতুন চিকিৎসকদের সংগঠনে এগিয়ে দিতে চাইছে। এমন তিন জনকে বাছা হয়েছে, যাঁরা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে যেমন কৃতী, তেমনই তাঁদের ভাবমূর্তিও স্বচ্ছ। চিকিৎসক হয়েও যিনি চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত না রেখে দল ও সরকারকে সময় দিয়েছেন, শ্যামপুকুরের সেই বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাকেই নতুন চিকিৎসক নেতা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।

সোমবার ‘প্রগ্রেসিভ হেল্‌থ অ্যাসোসিয়েশন’ নামে নতুন সংগঠনের কথা ঘোষণা করেছেন শশী। সংগঠনের নতুন কমিটিও ঘোষণা করেছেন তিনি। সংগঠনে রয়েছেন তৃণমূলের সাত জনপ্রতিনিধি। যাঁদের মধ্যে নতুন তিন জন। তাঁরা হলেন বালির বিধায়ক রানা চট্টোপাধ্যায়, বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক খগেন মাহাতো। তিন জনের মধ্যে গোপীবল্লভপুরের খগেন গত ২৫ বছর ধরে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। বাম জমানাতেও জঙ্গলমহলে তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তবে কখনওই সে ভাবে সামনে আসেননি। ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা চিকিৎসক উমা সোরেনের হাত ধরে দলের চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। তবে ২০২১ সালে গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতোর বদলে নতুন প্রার্থীর সন্ধান হলে টিকিট পান খগেন। তাঁকে নতুন সংগঠনের সহকারী সম্পাদক করা হয়েছে। খগেন বলেছেন, ‘‘নীরবে গত ২৫ বছর ধরে দল করেছি। দল যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করেছি। নতুন সংগঠনেও আমায় যা কাজ দেওয়া হবে, আমি করার চেষ্টা করব।’’

Advertisement

ঘটনাচক্রে, বালির বিধায়ক তথা শিশু চিকিৎসক রানার সন্ধান এনে দিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন রানা। বালির তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া বিজেপিতে যোগ দিলে রানাকে প্রার্থী করার বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্বকে রাজি করিয়েছিলেন প্রশান্তই। সোমবার নতুন সংগঠন ঘোষণার সাংবাদিক বৈঠকে শশীর পাশেই দেখা গিয়েছে রানাকে। তাঁকে সংগঠনের সহ-সভাপতি করা হয়েছে। তবে নিজের নতুন দায়িত্ব প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বালির বিধায়ক। রানার মতোই বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক চক্ষু বিশেষজ্ঞ সপ্তর্ষিকেও খুঁজে বার করেছিলেন তৎকালীন আইপ্যাক প্রধান প্রশান্তই। তাঁর সংস্থা একেবারে নিচুতলায় সমীক্ষা করে ফুটবলার বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের বদলে তাঁকে বসিরহাট দক্ষিণে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। নতুন সংগঠনে জায়গা পেয়েছেন তিনিও। তাঁকে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

১৯৯৮ সালে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বেশ কিছু নামজাদা চিকিৎসক জড়িত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে, যাঁদের অন্যতম ছিলেন অধুনাপ্রয়াত রঞ্জিত পাঁজা। তৃণমূলের টিকিটের বারাসত লোকসভা থেকে সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। বারাসতের বর্তমান সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারও তৃণমূলে প্রথম দিন থেকেই মমতার সঙ্গী। তাঁর স্বামী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার মহিষাদল থেকে দু’বার বিধায়ক হয়েছিলেন। ছিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যও। প্রাক্তন সাংসদ তথা বর্তমান বিধায়ক রত্না দে নাগও সাংসদ ছিলেন। এখন তিনি বিধায়ক। যদিও এই চিকিৎসক নেতারা কোনও দিন তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন ‘প্রগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সঙ্গে নিজেদের সে ভাবে যুক্ত করেননি। বরং রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনের ‘মুখ’ হয়ে উঠেছিলেন উলুবেড়িয়া উত্তরের বিধায়ক নির্মল মাজি, শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়, জগৎবল্লভপুরের প্রাক্তন বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লা এবং সদ্য তৃণমূল থেকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হওয়া প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement