ফিনাইল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন বাণেশ্বরের একটি বেসরকারি হোমের তিন তরুণী আবাসিক। কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁদের। অবস্থা এখন স্থিতিশীল। হোমে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর জায়গা নির্বাচন নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতান্তর হয় তাঁদের। নানান অব্যবস্থায় কিছু দিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন আবাসিকরা। শুক্রবার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর পরে সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ হয়।
শনিবার সকালে তিন তরুণীর ফিনাইল খাওয়ার খবর জানাজানি হয়। এরপরেই দিনভর অন্য আবাসিকরা বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। অভিযোগ, পর্যাপ্ত খাবার পান না আবাসিকরা। মেলে না জামা কাপড় ও অন্য প্রয়োজনের জিনিসও। প্রতিবাদ করলেই জোটে মারধর।
কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবালও জানান, ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। হাসপাতালে অসুস্থ তরুণীদের দেখতে যান কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলে জেলাশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনে বাণেশ্বরে ওই হোমটি চালায় নিউ ভারতী ক্লাব নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সের ২৬ জন আবাসিক থাকেন। কিছু দিন ধরে তাঁরা হোম কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের অভিযোগে সরব হন। হোমের পরিচালন কমিটির সদস্য ভজন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগও আনেন তাঁরা। ৮ জানুয়ারি দুই আবাসিক ফোন করার জন্য হোম লাগোয়া ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অফিসে গেলে ভজনবাবু তাঁদের মারধর করেন বলে জানান। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আবাসিকরা পথে নামেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সেখানেই হোমে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই এনজিওর সম্পাদক বাবলু কার্জি এবং অভিযুক্ত ভজন চৌধুরী অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁরা ওই ঘটনার জন্য হোম সুপারিন্টেডেন্ট ইতি রায়কে দায়ী করেন। বলেন, “আমরা যা বরাদ্দ পাই সেই হিসেবে সমস্ত কিছু দেওয়া হয়। সুপার নানাভাবে আবাসিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন আমরা বরাদ্দ বেশি পেয়ে কম খরচ করছি।” তাঁরা বছরে ৫ লক্ষ টাকার মতো বরাদ্দ পান বলে জানিয়েছেন। ইতিদেবী বলেন, “আবাসিকরা কষ্টের মধ্যে আছেন। নানা অভিযোগ তাঁদের। কী কী অন্যায় হয় সব প্রশাসনকে জানিয়েছি।”
এ দিন হাসপাতালে এক তরুণী জানান, শুক্রবার রাতে হোমে সিসিটিভি বসানো হচ্ছিল। হোমের ভিতরে তা বসানোর ক্ষেত্রে আপত্তি তোলেন আবাসিকরা। তিনি বলেন, “হোমে মেয়েরা থাকি। চিন্তাভাবনা করে সিসিটিভি বসানো উচিত।”