বরাত মিলতেই বিক্ষোভ, বন্ধ টিটাগড় ওয়াগনস

বরাত ছিল না গত ছ’মাস। কাজ না থাকলেও বেতন পাচ্ছিলেন কর্মীরা। কিন্তু এখন যখন কিছু কাজের বরাত এসেছে সবে, ঠিক তখনই কর্মী বিক্ষোভের জেরে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে টিটাগড় ওয়াগনস। শুক্রবার মাঝ রাতে ওই কারখানার কর্তৃপক্ষ সাসপেনসন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছেন গেটে। এর ফলে পুজোর মুখে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল এই কারখানার স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৭০০ কর্মীর ভবিষ্যৎ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
Share:

কারখানায় কাজ বন্ধের নোটিস দেখছেন শ্রমিকেরা। —নিজস্ব চিত্র

বরাত ছিল না গত ছ’মাস। কাজ না থাকলেও বেতন পাচ্ছিলেন কর্মীরা। কিন্তু এখন যখন কিছু কাজের বরাত এসেছে সবে, ঠিক তখনই কর্মী বিক্ষোভের জেরে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে টিটাগড় ওয়াগনস। শুক্রবার মাঝ রাতে ওই কারখানার কর্তৃপক্ষ সাসপেনসন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছেন গেটে। এর ফলে পুজোর মুখে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল এই কারখানার স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৭০০ কর্মীর ভবিষ্যৎ।

Advertisement

রাজ্যে নতুন শিল্প বিনিয়োগ টানতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছেন। একই লক্ষ্যে শুক্রবার তিনি একগুচ্ছ কমিটিও গঠন করেছেন। এই কমিটিগুলির কাজ হবে রাজ্যের ভাবমূর্তি তুলে ধরার পাশাপাশি শিল্প ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারনের সময় পরামর্শ দেওয়া। মুখ্যমন্ত্রী যখন নবান্নে বসে এই ধরনের একের পর এক কমিটি গঠন করে চলেছেন, তখনই নানা কারণে রাজ্যে একের পর এক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যা এ রাজ্যের শিল্প ক্ষেত্রে লগ্নি টানার ক্ষেত্রে বিরূপ বার্তা দিচ্ছে বলেই মনে করছেন শিল্পকর্তারা।

টিটাগড় ওয়াগনস-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর উমেশ চৌধুরী জানিয়েছেন, কর্মীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্যই তাঁরা কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “অল্প কিছু কর্মী কারখানায় অনেক দিন ধরেই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিলেন। অন্যদের কাজে বাধা দিচ্ছিলেন। আমরা ওই ধরনের কর্মীদের মধ্যে কয়েক জনকে সাসপেন্ড করেছি। তার প্রতিবাদে শুক্রবার শ্রমিকরা ‘টুল ডাউন স্ট্রাইক’ করেন। তাই বাধ্য হয়ে সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস দিয়েছি।”

Advertisement

এতে পুজোর মুখে সংস্থার ২৪০ জন স্থায়ী কর্মী-সহ প্রায় সাতশো কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্যায় ভাবে কয়েক জন শ্রমিককে ‘ছাঁটাই’ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করাতেই রাতারাতি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা।

বেশ কিছু দিন হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে ডানলপ কারখানা। মাঝে সাসপেনসন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল জেশপেও। সম্প্রতি জেশপ খুললেও, উৎপাদন কার্যত বন্ধই। স্থানীয় মানুষের চাকরির দাবি, শ্রমিক বিক্ষোভ, বেশি দামে মাল কেনার জন্য সিন্ডিকেটের চাপ এই সব কারণে গত এক-দেড় বছরে রাজ্যের বহু কারখানাতেই বিভিন্ন সময়ে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। সম্প্রতি এই ধরনের সমস্যায় ভুগতে হয়েছে দুর্গাপুরের একটি কাগজ কারখানা ও স্পঞ্জ আয়রন কারখানার মালিকদের। শিল্প ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যাগুলি দ্রুত মেটানোর ব্যাপারে সরকারের তরফে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও, কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না বলে শিল্পমালিকদের অনেকের অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে কর্মীদেরও। যেমন টিটাগড় ওয়াগনস-এর কর্মীদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের নিয়মমাফিক প্রাপ্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধাগুলি দেওয়া হচ্ছিল না। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন, কখনও তা আন্দোলনের চেহারা নেয়নি। কিন্তু তাঁদের আবেদন মানেনি মালিকপক্ষ। শ্রমিকদের বক্তব্য, প্রতি বারই রেলের বরাত এবং উৎপাদনের দোহাই দিয়ে তাঁদের দাবিগুলি পাশ কাটিয়ে যান সংস্থা কর্তৃপক্ষ।

শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, সম্প্রতি রেলের কাছ থেকে টিটাগড় ওয়াগনস ১৩৬টি ওয়াগন তৈরির বরাত পায়। তার মধ্যে ৩২টি ওয়াগন ইতিমধ্যেই রেলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় ওয়াগন মেরামতির বরাতও পেয়েছে তাঁদের সংস্থা। যার মধ্যে নোয়াপাড়ায় মেট্রোর রেক মেরামতিও রয়েছে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, এই সমস্ত জায়গায় মেরামতির কাজে যাওয়া কিংবা ওয়াগন সরবরাহ করতে যাওয়া কোনও বিষয়েই আলাদা করে শ্রমিকদের টাকাপয়সা বা আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া হয় না। এই সব বিষয় নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান আইএনটিটিইউসি এবং সিটু-র নেতারা। কারখানা কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসবেন বলে আশ্বাসও দেন। কিন্তু শুক্রবার ওই কারখানার আইএনটিটিইউসি ইউনিয়নের সভাপতি ধর্মেন্দ্র যাদব এবং সিটু-র সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত মাঝি-সহ মোট ৯ জনকে সংস্থা কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড করেন।

শিল্পপতি জে পি চৌধুরী ১৯৯৭ সালে টিটাগড় পেপার মিলের জমিতে গড়ে তোলেন এই টিটাগড় ওয়াগনস। তাঁর ছেলে, সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর উমেশবাবু জানিয়েছেন, কারখানার ভিতরে শৃঙ্খলা ফিরে এলে এবং কর্মীরা উৎপাদন বাড়াতে রাজি হলে কারখানা চালু করতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। তিনি বলেন, “ছ’মাস ধরে আমাদের ওয়াগনের কোনও বরাত ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা কর্মীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিয়েছি। সম্প্রতি কিছু কাজের বরাত হাতে এসেছে। সেই সময়েই কিছু কর্মী উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাতে শুরু করেছেন। সেটা আমরা বরদাস্ত করতে পারি না।”

রাজ্যের ডেপুটি শ্রম কমিশনার আশিস সরকারকে বিষয়টি দুই সংগঠনের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে শ্রমিকনেতাদের কথা হয়েছে। কারখানা যাতে দ্রুত খোলার ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে আগামী সোমবারই মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন