জব্বার শেখ
নাকাশিপাড়ার গ্রামে দলীয় কর্মী খুনে জড়িতদের ‘গুষ্টিকে’ ছাড়বেন না বলে হুমকি দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। আশরাফুল মণ্ডল ওরফে আসাই নামে সেই তৃণমূল কর্মী খুনে পুলিশ যাঁকে ধরল, সেই জব্বার শেখও তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ বলেই এলাকায় পরিচিত।
সোমবার রাতে পুলিশ কালীগঞ্জের আশাচিয়া গ্রাম থেকে জব্বারকে গ্রেফতার করে। স্থানীয় সূত্রের খবর, আগে সিপিএম করলেও বছরখানেক জব্বারের স্ত্রী তৃণমূলে যোগ দেন। জব্বারও শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হন। নাকাশিপাড়ার হরনগর এলাকায় ক্ষমতা দখল করা নিয়ে তাঁর সঙ্গে গোলমাল বেধেছিল নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য আশরাফুলের। চলতি বছর ৩১ মে হরনগর গ্রামের বাড়ি থেকে মেরেকেটে একশো মিটার দূরত্বে একটি চায়ের দোকানে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করা হয় আশরাফুলকে। পর দিন নিহতের বাবা নিয়াজুদ্দিন মণ্ডল ছ’জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন। প্রথম নামটিই ছিল জব্বারের। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান।
জব্বার গ্রেফতার হওয়ার পরেই শাসক দলকে বিঁধতে শুরু করেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, “এতে বোঝা গেল, নিহত কর্মীর স্মরণসভায় গিয়ে সাংসদ তাপস পাল যা বলেছিলেন, সব ভুল এবং ভিত্তিহীন! মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন, এ বার কি তিনি আইনকে ঠিক পথে চলতে দেবেন?” বিরোধীদের কদর্য হুমকি দেওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্য সরকার যে ভাবে তাপসের পক্ষে দাঁড়িয়ে আদালতে আইনি লড়াই চালাচ্ছে, তার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মানসবাবুরা। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম আবার দাবি করেছেন, নাকাশিপাড়ার ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে তৃণমূল জমানায় তৃণমূল কর্মীদেরও নিরাপত্তা নেই। তাঁর কথায়, “বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনের বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে বলেছিলেন। খুন হন সাগর ঘোষ। এখানে আর এক জন খুন হয়ে গিয়েছেন। আর শাসক দলের সাংসদ বিরোধীদের হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর সাত খুন মাফ হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল কর্মী ধরা পড়লে বলা হচ্ছে, সে আমাদের লোক নয়।”
নদিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জব্বারকে দলের লোক বলে মানেননি। জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “জব্বার পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই আমাদের দলে আসার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বহু অপরাধে অভিযুক্ত বলে ওকে আমরা দলে নিইনি।”
হরনগর গ্রামটি পলাশিপাড়া বিধানসভার অন্তর্গত। প্রায় এক দশক ধরে মুম্বইয়ে ঠিকাদারির কাজ করা আশরাফুল বছর তিনেক আগে গ্রামে ফিরে তৃণমূলে যোগ দেন। পঞ্চায়েত ভোটে আশরাফুল তৃণমূলের টিকিটে জিতে নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হন। হরনগর পঞ্চায়েতে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি হলেও পরে আশরাফুলের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত সদস্যেরা শাসক দলে ভেড়েন। পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে আসে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময়ই পঞ্চায়েতে সিপিএমের টিকিটে জেতা জব্বারের স্ত্রী ফতেমা বিবি শাসক দলে যোগ দেন। তার পরেই এলাকার দখল নিয়ে লড়াই বাধে আশরাফুল ও জব্বারের।
এরই মধ্যে গত ১৪ জুন হরনগরে আশরাফুলের স্মরণসভায় যোগ দেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। সভায় তাপস বলেন, “আসাইকে যারা খুন করেছে, আমি তাপস পাল বলে যাচ্ছি, তাদের গুষ্টিকেও ছাড়ব না। এর জন্য যতদূর যেতে হয় যাব।” এর পরেই চৌমুহা, তেঘরি, গোপীনাথপুর প্রভৃতি গ্রামে গিয়ে কর্মীদের উদ্দেশে বিরোধীদের ‘মেরে ফেলা’, ‘কেটে ফেলা’র পরামর্শ দেন অভিনেতা-সাংসদ। চৌমুহায় নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ দাবি করে ‘ছেলেদের ঢুকিয়ে রেপ করে’ দেওয়ার হুমকিও দেন। সেই ভিডিও-ফুটেজ প্রকাশ্যে আসতে শুরু হয় তোলপাড়।
১৩ অগস্ট তাপস পাল মামলার রায় হওয়ার কথা কলকাতা হাইকোর্টে।