রেশন কার্ড নিয়ে বিবাদে খুন সিভিক ভলান্টিয়ার

ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব ছিল প্রশাসনের। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই কাজ তুলে দেয় সিভিক ভলান্টিয়ারদের হাতে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, নিজের দলের লোককে রেশন কার্ড পাইয়ে দিতে কাজে লাগানো হয়েছে কার্যত তৃণমূল কর্মী ওই সিভিক ভলান্টিয়ারদের।

Advertisement

নুরুল আবসার

উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০২:৫০
Share:

জয়ন্ত সাঁতরা

ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব ছিল প্রশাসনের। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই কাজ তুলে দেয় সিভিক ভলান্টিয়ারদের হাতে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, নিজের দলের লোককে রেশন কার্ড পাইয়ে দিতে কাজে লাগানো হয়েছে কার্যত তৃণমূল কর্মী ওই সিভিক ভলান্টিয়ারদের। মঙ্গলবার সেই ক্ষোভের বলি হলেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে তৃণমূল কর্মী এক সিভিক ভলান্টিয়ার। পুলিশের বক্তব্য, এই খুনে অভিযুক্তও তৃণমূল কর্মী। গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়লেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

ওই কার্ডের তথ্য যাচাইয়ের কাজে যে নানা অনিয়ম হয়েছে তা বারবারই সামনে এসেছে গত এক মাসের বিভিন্ন ঘটনায়। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে কখনও জেলাশাসকের দফতরে, কখনও ব্লক অফিসে। বিভিন্ন জেলায় রেশন ডিলাররা গণ-ইস্তফা দিচ্ছেন। বিরোধীদের বক্তব্য, সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে ওই কাজ করানোর জন্যই যত গোলমাল।

গত মাসেই ওই কার্ড নিয়ে ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দিয়ে ফেরার পথে রায়নায় বোমায় খুন হন এক সিপিএম কর্মী। অভিযুক্ত ছিল তৃণমূল। মঙ্গলবার রাতে উদয়নারায়ণপুরে নজরখান গ্রামে একটি ক্লাবের সামনে যাঁকে কুপিয়ে খুন করা হয়, সেই জয়ন্ত সাঁতরাকে (২৪) খুনে অভিযোগের তির তাঁর পড়শি তথা এলাকার তৃণমূল কর্মী সিভিক ভলান্টিয়ার বাপ্পা মণ্ডলের দিকে। দু’টি পরিবারই ডিজিটাল রেশন কার্ড পেয়েছে। কিন্তু দু’টি কার্ড দু’রকম। জয়ন্তর পরিবার পেয়েছে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত (এসপিএইচএইচ) কার্ড। যাতে চাল-গমের সঙ্গে চিনিও পাওয়ার কথা। বাপ্পার পরিবার পেয়েছে সুবিধাপ্রাপ্ত কার্ড (পিএইচএইচ)। সেই কার্ডে শুধু চাল-গম পাওয়ার কথা। এ নিয়ে জয়ন্ত ও বাপ্পার মধ্যে গোলমাল চলছিলই।

Advertisement

বাপ্পার পরিবারের অভিযোগ ছিল, সমীক্ষার সময় জয়ন্ত কৌশলে তাঁদের পরিবার যাতে শুধু চাল-গম পায় নথিতে সেই তথ্য দেয়। কিন্তু নিজেদের ক্ষেত্রে চাল-গমের সঙ্গে চিনি পাওয়ার মতো তথ্য দিয়েছে। জয়ন্তর বাবা নবকুমারবাবু তৃণমূল নেতা (উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ-সভাপতি) এবং মা হারাদেবী স্থানীয় হরিশপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা হওয়ার সুবিধা পান। বাপ্পাদের পরিবারও তৃণমূল সমর্থক। কিন্তু তাঁদের কেউ নেতা নন।

বাপ্পার পরিবার যে অভিযোগ তুলেছে, একই অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে রাজ্যের নানা প্রান্তে এর আগেই শোনা গিয়েছে বিরোধীদের মুখে। এমনকী ক্ষোভ দেখা গিয়েছে শাসকদলের অন্দরেও। গত মাসেই হাওড়ারই আমতায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রক্তারক্তিও হয়েছে। আমতার একটি পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান স্বীকারও করেছেন, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়াররা আমাদের কাছে এসেছিলেন। আমাদের কাছ থেকেই সব কিছু জেনে নিয়ে চলে যান।’’

বস্তুত, ওই কার্ড পাওয়ার জন্য যে ফর্ম পূরণ করতে হয় উপভোক্তাদের, তা যাচাইয়ের কথা ছিল বিডিও-দের। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, প্রশাসন নয়, আবেদনপত্রগুলি যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। অভিযোগ ওঠে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের একটি বড় অংশ যাচাইয়ের কাজটি ঠিক ভাবে করেননি। শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁরা পছন্দসই লোকের আবেদনপত্রে টিক মেরেছেন। অন্য দল বা নেতার অন্য গোষ্ঠীর লোক বা প্রকৃত উপভোক্তা বাদ পড়েছেন। জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তথ্য যাচাইয়ের কাজ এতটাই তড়িঘড়ি করতে বলা হয়েছিল যে সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্ট পড়ে দেখার সুযোগও সে ভাবে পাননি দফতরের আধিকারিকেরা।

জেলা সিপিএম সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘উদয়নারায়ণপুরের ঘটনা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল কার্ড বিলির ক্ষেত্রে দলবাজি করতে গিয়েছিল বর্তমান সরকার। তা বুমেরাং হয়েছে।’’ একই বক্তব্য আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রেরও। পক্ষান্তরে, উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজার দাবি, ‘‘খুনের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন