SIR in West Bengal

চার দাবি নিয়ে আবার সিইও দফতরে তৃণমূল! ক’টা পূরণ হল? হিসাব দিয়ে প্রতিনিধি দল জানাল, লড়াই চলবে

মঙ্গলবার সিইও দফতরে যান রাজ্যের চার মন্ত্রী— শশী পাঁজা, পুলক রায়, বিরবাহা হাঁসদা এবং পার্থ ভৌমিক। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ বাপি হালদার। সিইও দফতর থেকে বেরিয়ে পার্থ জানান, কিছু দাবির সদুত্তর মিলেছে। কিছু নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:৩১
Share:

(বাঁ দিক থেকে) পুলক রায়, পার্থ ভৌমিক এবং শশী পাঁজা। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

আবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরে গেল তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার রাজ্যের সিইও মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করে তারা। চারটি দাবির কথা তুলে ধরা হয় তৃণমূলের তরফে। সিইও দফতর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের ওই প্রতিনিধি দল জানায়, কিছু দাবির সদুত্তর মিলেছে। কিছু নয়। তবে লড়াই চলবে শেষ পর্যন্ত।

Advertisement

মঙ্গলবার সিইও দফতরে যান রাজ্যের চার মন্ত্রী— শশী পাঁজা, পুলক রায়, বিরবাহা হাঁসদা এবং পার্থ ভৌমিক। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ বাপি হালদার। সিইও দফতর থেকে বেরিয়ে পার্থ বলেন, ‘‘আমরা গতকালও (সোমবার) এসেছিলাম কিছু দাবি নিয়ে। তবে সব দাবি পূরণ হয়নি তাই আজ (মঙ্গলবার) আবার সিইও অফিসে এসেছি। আমাদের যা দাবি ছিল, তার কিছু উত্তর পেয়েছি।’’

দাবি ১: অসুস্থদের শুনানি হোক বাড়িতে

Advertisement

সোমবারই কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সি ভোটারদের শুনানিকেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁদের বাড়িতেই শুনানির ব্যবস্থা করা হবে। সেই তালিকায় রাখা হয়েছে অসুস্থ এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদেরও। মঙ্গলবার সিইও দফতরে অসুস্থ বা যাঁদের অস্ত্রোপচার হয়েছে, তাঁদের শুনানিকেন্দ্রে কেন যেতে হবে সেই প্রশ্ন তোলে তৃণমূল। কমিশনের কাছে তাদের প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা অসুস্থ তাঁদের কেন ওই তালিকায় রাখবেন না? কেন কবি জয় গোস্বামীকে অসুস্থ অবস্থায় আসতে হবে?’’ তৃণমূলের প্রশ্নে কমিশন সোমবারের বিজ্ঞপ্তির কথা জানায়। অসুস্থ বা বিশেষ ভাবে সক্ষমদের শুনানিকেন্দ্রে আসতে হবে না, সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির কথা তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে জানায় কমিশন। তবে তৃণমূলের বক্তব্য, ‘‘কমিশনের নতুন নির্দেশ বিএলও বা ইআরও স্তরে পৌঁছোয়নি। সংশ্লিষ্ট ওই নির্দেশিকা আবার পাঠান।’’ একই সঙ্গে তৃণমূলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে অসুস্থ বা বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য কমিশনের শুনানিকেন্দ্রিক নয়া নির্দেশিকা সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করা হয়।

দাবি ২: লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি তালিকা

দিন দুয়েক আগে সাংবাদিক বৈঠকে লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি-র তালিকা প্রকাশ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, কমিশন একই দিনে কী ভাবে খসড়া তালিকা আর নাম-পদবি-সহ নানা ধরনের গরমিলের তালিকা (লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি) প্রকাশ করল? অভিষেক এ-ও দাবি করেছিল, ‘‘লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি বলে একটা লিস্ট হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও অফিসিয়াল প্রেস রিলিজ নেই। জিক্যাল ডিসক্রিমেন্সিতে বলা হচ্ছে, ১ কোটি ৩৬ লক্ষ লোক এমন রয়েছে যাঁদের নামের বানানে ভুল হয়েছে, বাবার সঙ্গে বয়সের পার্থক্য রয়েছে। সেই তালিকা অবিলম্বে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিস্তারিত প্রকাশ করা হোক।’’ অভিষেকের সেই দাবিই মঙ্গলবার রাজ্যের সিইও-র কাছে রাখে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। পার্থ বলেন, ‘‘আমরা লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি তালিকা চেয়েছিলাম। তার প্রেক্ষিতে আমরা জানতে পেরেছি ওই তালিকা ইআরও স্তরে পৌঁছে দিয়েছে।’’

দাবি ৩: বাইরে থাকা ভোটারদের ভার্চুয়ালি শুনানি

তৃণমূলের দাবি, যাঁরা পড়াশোনা, চাকরি বা অন্য কোনও কারণে রাজ্যের বাইরে আছেন, তাঁদের শুনানির জন্য এখানে না-ডেকে ভার্চুয়ালি করা হোক। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের প্রশ্ন, ‘‘কেউ আসতে না-পারলে কী ভাবে তাঁর মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া যায়?’’

দাবি ৪: ৫০ বছর একই এলাকায় থাকা বাসিন্দাদের জন্য নয়া ব্যবস্থা

তৃণমূলের দাবি, ৫০ বা তার বেশি বছর এলাকায় রয়েছে, এমন অনেকে আছেন, যাঁদের কমিশনের ঠিক করে দেওয়া ১১টি নথির মধ্যে কিছুই নেই। এমনকি নাম নেই ২০০২ সালের এসআইআর তালিকাতেও! অথচ এলাকার সকলে তাঁকে চেনেন। শুধুমাত্র নথি না থাকার জন্য কেন তাঁদের বাদ দেওয়া হবে? কমিশনের কাছে তৃণমূলের দাবি, ‘‘সংশ্লিষ্ট ওই ভোটারদের বিষয় খতিয়ে দেখে ভোটার তালিকায় নাম তোলার ব্যবস্থা করা হোক।’’

তৃণমূলের বক্তব্য, কমিশনের সব নিয়ম তো সাধারণ মানুষ জানেন না। তাঁদের কাছে সঠিক নির্দেশ পৌঁছাচ্ছে কি না, তা দেখারও দায়িত্বও কমিশনের। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল মনে করেন, ‘‘কমিশনের প্রচারে খামতি রয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষের কথা নির্বাচন কমিশনকে পৌঁছে দিচ্ছি। যদি সেই সব দাবি মান্যতা পায় তবে এ রাজ্যের মানুষ খুশি হবে।’’ সিইও দফতর সূত্রে খবর, তৃণমূলের সব বক্তব্য দিল্লিতে কমিশনের সদর দফতরের কাছে পাঠানো হবে। তারা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।

মঙ্গলবার দলের তরফে একটি চিঠিও সিইও দফতরে জমা দেয় তৃণমূল। সেই চিঠিতে দাবি করা হয়, ৮৫ নয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুনানি করার ক্ষেত্রে ৬০ বছরকে মান্যতা দেওয়া হোক। একই সঙ্গে শুনানিতে সব রাজনৈতিক দলের বিএলএ-২-দের থাকা নিয়ে কমিশন ব্যাখ্যা দিক, চিঠিতে সেই বিষয়ও জানানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement