SIR in West Bengal

রাজ্যে ন’জন জীবিতকে ‘মৃত, নিখোঁজ দেখিয়ে’ খসড়া তালিকা থেকে বাদ! সিইও দফতরে গিয়ে অভিযোগ তৃণমূলের, মিলল আশ্বাস

রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, বিএলও-দের হঠাৎ হঠাৎ আবার বাড়ি বাড়ি যেতে বলা হচ্ছে। কেন এমন বলা হল? তাঁদের উপর কেন বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৭
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজকুমার আগরওয়ালের সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা করল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পুলক রায়, শশী পাঁজা এবং সাংসদ পার্থ ভৌমিক। দফতর সূত্রের খবর, ৯ জন জীবিত ব্যক্তিকে ‘মৃত, নিখোঁজ’ দেখিয়ে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। শুনানির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথাও তুলে ধরেছে তারা। কমিশন জানিয়েছে, প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)-এর ইচ্ছাকৃত কোনও ভুল থাকলে পদক্ষেপ করা হবে।

Advertisement

রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে প্রথম থেকেই সরব শাসকদল তৃণমূল। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে তা নিয়ে কমিশনকে কটাক্ষ করেছেন খোদ দলের সর্বোচ্চ নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার খসড়া তালিকা নিয়ে অভিযোগ জানাতে সিইও-র দফতরে যায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। সূত্রের খবর, জীবিত ভোটারকে ‘মৃত, নিখোঁজ’ দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে তারা। প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভোটারেরা অভিযোগ করেছেন, খসড়া তালিকায় তাঁদের নামের পাশে ‘মৃত বা নিখোঁজ’ লেখা হয়েছে। সেই নিয়ে মঙ্গলবার সরব হয়েছে তৃণমূল।

শুনানিতে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য রাজ্যের বহু ভোটারকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে তৃণমূল। সিইও দফতর থেকে বেরিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে কি না তা নিয়ে অনেকে ভীত, সন্ত্রস্ত হচ্ছেন। অসঙ্গতি নিয়ে নানা রকম কথা বলা হচ্ছে। বাবার নামের বানান ভুল হলেও শুনানির জন্য ডাকা হচ্ছে। আমাদের বক্তব্য, ওই সব ক্ষেত্রে শুনানির নোটিস দেওয়ার দরকার নেই।’’

Advertisement

চন্দ্রিমা আরও জানান, এসআইআরের শুনানির ক্ষেত্রে ১১টি নথি গ্রাহ্য বলে জানানো হচ্ছে। অথচ সুপ্রিম কোর্ট ১২তম নথি হিসাবে আধার কার্ড নিতে বলেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোথাও সেটা বলছে না। আধার কার্ড পরিচয়পত্র হিসাবে গণ্য হবে। কিন্তু ১১টি নথির কোনওটিই নাগরিকত্বের নথি না। সবই পরিচয়পত্র। চন্দ্রিমার অভিযোগ, শুনানি কেন্দ্রগুলি ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে করা হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এত দূরে যেতে হবে কেন? গ্রাম পঞ্চায়েত, পুরসভার দফতরে শুনানি করা হোক।’’ বিএলও-দের ‘চাপ’ নিয়েও কথা বলেছেন চন্দ্রিমা। তিনি জানান, বিএলও-দের হঠাৎ হঠাৎ আবার বাড়ি বাড়ি যেতে বলা হচ্ছে। কেন এমন বলা হল? তাঁদের উপর কেন বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমার অভিযোগ করে বলেন, ‘‘যাঁরা রাজ্যের বাইরে রয়েছেন, তাঁরা কী ভাবে শুনানিতে আসবেন? আমরা কমিশনকে বলেছি, রাজ্যের বাইরে রয়েছেন, এমন ভোটারদের এনুমারেশন ফর্ম বাড়িতে যিনি পূরণ করেছেন, তাঁকে ডাকা হোক শুনানিতে। কাজ ছেড়ে এখানে এলে দায় কে নেবে? অন্য রাজ্যে কাজ চলে গেলে কী হবে?’’ ২৩ ডিসেম্বরেও কেন শুনানি হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন চন্দ্রিমা। তৃণমূলের দাবি, ভোটার তালিকায় অনলাইনে যত আবেদন হচ্ছে, সেই তালিকা দিতে হবে।

পার্থ বলেন, ‘‘গরিব মানুষকে শুনানির জন্য টাকা খরচ করে দূরে যাতে যেতে না হয়, আমরা কমিশনকে বলেছি। আমাদের পছন্দের জায়গায় করতে হবে না। প্রয়োজনে ব্যাঙ্কে করুন। শুধু খেয়াল রাখুন গ্রামের মানুষকে যাতে দূরে যেতে না হয়!’’

কমিশন সূত্রে খবর, কমিশনের রুটিন সমীক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের শাসকদল। তাঁদের অভিযোগ, কেন গোটা রাজ্যে ৮১টি আসনে এই সমীক্ষা করা হয়েছে। সূত্রের খবর, কমিশন জানিয়েছে, প্রতি বার বিধানসভা ভোটের আগে নিয়ম মেনে এই সমীক্ষা করা হয়। রাজ্য খরচ দিলে সব বিধানসভা কেন্দ্রেই সমীক্ষা করা হবে।

সোমবার কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোরে দলের বুথস্তরের এজেন্ট (বিএলএ)-দের নিয়ে সভা করেন মমতা। তিনি বলেন, “প্রতি দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিজেপির অফিস থেকে যা বলে দেওয়া হচ্ছে, তা-ই চেঞ্জ করা হচ্ছে। আমি শুনেছি নির্বাচন কমিশনের অফিসে বিজেপি একটা এজেন্ট রেখে দিয়েছে। সে অনলাইনে যাঁর ইচ্ছে নাম বাতিল লিখছে। পুরো লিস্টটা করে দিচ্ছে বিজেপির পার্টির লোকেরা। এমন নির্লজ্জ কমিশন আমি জীবনে দেখিনি, দেখতেও চাই না।” এ বার খসড়া তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া নিয়ে সিইও-র দফতরে গেল তৃণমূলের প্রতিনিধিদল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement