ভোটের দু’দিন আগে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল কর্মী খুনের মামলা করেছিল শাসক দল। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিও হয়েছিল। অথচ সেই মামলার নিষ্পত্তির আগেই তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিয়ে এ বার ‘দলবদলু’ হলেন সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া।
ইদানীং যেনতেন দল ভাঙানোর খেলা শুরু হওয়ায় ‘দলবদলু’ শব্দটি কিন্তু বেছেছিলেন মানস নিজেই! তবে সোমবার, সেই তকমা যখন তাঁর গায়েই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেল, তখন বদলে গেল মানসের কথাও! বললেন, ‘‘রাজনীতি নদীর স্রোতের মতো! সোজা পথে আর চলে কোথায়!’’
মানসের সঙ্গেই এ দিন তৃণমূল ভবনে শাসক দলে যোগ দেন কংগ্রেসের প্রাক্তন পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ শোহরাব-সহ আরও আধ ডজন ছোট ও মাঝারি কংগ্রেস নেতা। অনুষ্ঠানে শাসক দলের তরফে ছিলেন মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুরে অভিষেকের বাড়ি গিয়ে সেখান থেকে তৃণমূলের যুব সভাপতির গাড়িতে চড়েই তৃণমূল ভবনে পৌঁছেছিলেন মানস। সাংবাদিক বৈঠকেও বসেছিলেন অভিষেকের ঠিক পাশে। সেখানেই অভিষেকের উদ্দেশে মানস বলেন, ‘‘এখন উনিই আমার নেতা। পার্থবাবু, মুকুলবাবুরাও আমার নেতা। এখন থেকে আমার মন, বিবেক সবটাই তৃণমূল।’’ পরে ফের অভিষেকের গাড়িতে চেপে সস্ত্রীক মানস নবান্নে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করেন।
দিনভরের এই ঘটনা প্রবাহের মধ্যে মানস সহজ-সপ্রতিভ থাকারই চেষ্টা করেন। তবে প্রত্যাশিত ভাবেই অপ্রিয় কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। যেমন, খুনের মামলা থেকে রেহাই পেতেই কি তৃণমূলের দ্বারস্থ হলেন? জবাবে মানস বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। আগাম কিছু বলব না।’’ বিধায়ক পদ থেকে কবে ইস্তফা তা জানতে চাওয়া হলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় মানস বলেন, ‘‘ও ব্যাপারে দল সিদ্ধান্ত নেবে।’’
প্রসঙ্গত, দলের অমত সত্ত্বেও মানস পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ আঁকড়ে থাকায় ইদানীং অধীর চৌধুরী-আব্দুল মান্নানের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চরমে পৌঁছেছিল। এ দিন অধীর-মান্নানকে কটাক্ষ করে মানস বলেন, ‘‘বিধান ভবনটাকে এখন ভুতুড়ে বাড়ি লাগছে। সেখানে জগাই-মাধাই দু’টো ভুতের ভয়ে সবাই ছুটে ছুটে পালাচ্ছে।’’ যা শুনে অধীরবাবু আবার বলেন, ‘‘জগাই-মাধাই তবু পুজো পেয়েছিল। কিন্তু কালীর পাশের খ্যাঁকশিয়াল কখনও পুজো পায়নি।’’
মানস দল ছাড়ায় এ দিন মেদিনীপুরের কংগ্রেস দফতরে লাড্ডু বিতরণ হয়। জেলার নেতাদের কথায়, এত দিনে কংগ্রেসের শাপমোচন হল।