পাহাড়ে অশান্তির পিছনে বিজেপির প্ররোচনা দেখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপি অবশ্য পাল্টা দায় চাপাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই। বিমল গুরুঙ্গদের আড়াল করে রাজ্য বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রান্ত নীতিই এই অবস্থার জন্য দায়ী। প্রদেশ কংগ্রেস অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেও মোর্চার হিংসাত্মক আন্দোলনের নিন্দা করেছে। বামফ্রন্টের ভূমিকা অনেকটা ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য সরকারকেই যা করার, করতে হবে বলে দাবি তাদের।
বুধবার কলকাতায় নিজের বাড়িতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আর বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী-সহ মন্ত্রিসভার উপস্থিতিতে মোর্চার উগ্র বিক্ষোভে পাহাড় জ্বলে ওঠে। তাতে দিলীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো পাহাড়ের মান্থলি কেটেছেন! মাসে মাসে যাচ্ছেন! চুলকে ঘা করেছেন। এ বার এমন টাইট দিয়েছে, যে উদ্ধারের জন্য সেনা ডাকলেন!’’ দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ারও মন্তব্য, ‘‘খুঁচিয়ে আগুন জ্বালিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহও এ দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে নানা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে তাঁদের ভাগ করার চক্রান্ত করেছিলেন। তারই ফল এই গোলমাল।’’ কলকাতায় তৃণমূলের এক নেতা পাল্টা বলেন, ‘‘বিজেপি নেতাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট— তাঁরা মোর্চার তাণ্ডবের নিন্দা তো করছেনই না, বরং, মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্য প্রশাসন বেকায়দায় পড়েছেন ভেবে পরিস্থিতি ‘উপভোগ’ করছেন! আটকে পড়া সাধারণ পর্যটকদের ভোগান্তির কথাও তাঁরা বিবেচনা করছেন না!’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মোর্চার তাণ্ডবের প্রেক্ষিতে বলেন, ‘‘এই হিংসার প্রতিবাদ করছি। কিন্তু এর শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।’’ পাহাড়ে যে বিক্ষোভের আঁচ ধূমায়িত হচ্ছে, তা মমতা আগে জানতে পারলেন না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অধীর। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমেরও বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সব কিছু দখল করার মানসিকতাই এই অবস্থার জন্য দায়ী। রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে সংবেদনশীল ভাবে পরিস্থিতি সামলাতে হবে।’’
মমতার পাহাড় নীতিকে নরেন্দ্র মোদীর কাশ্মীর নীতির সমতুল বলে কটাক্ষ করেছেন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। আর বিমান বসুর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাই সবচেয়ে জরুরি। সে জন্য সরকারের যা করণীয়, তা যেন অবিলম্বে করা হয়।’’