ফের কিডনিতে সংক্রমণ

মাটির মানুষ মান্নান প্রয়াত

মাস দেড়েক আগে, কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল তাঁর। সফল অস্ত্রোপচারের পরে আশা করা গিয়েছিল, প্রাণসংশয় আর নেই। কিন্তু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল দিন কয়েক ধরে। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে তড়িঘড়ি ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে, মঙ্গলবার বিকেলে সেখানেই মারা গেলেন তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভপতি মান্নান হোসেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪৪
Share:

দলনেত্রীর পাশে।—ফাইল চিত্র

মাস দেড়েক আগে, কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল তাঁর। সফল অস্ত্রোপচারের পরে আশা করা গিয়েছিল, প্রাণসংশয় আর নেই। কিন্তু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল দিন কয়েক ধরে। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে তড়িঘড়ি ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে, মঙ্গলবার বিকেলে সেখানেই মারা গেলেন তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভপতি মান্নান হোসেন। বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। রেখে গেলেন, দুই স্ত্রী, দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর মৃত্যুর পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দল এক জন জাতীয়তাবাদী নেতাকে হারাল। মুর্শিদাবাদে দলের সত্যিই বড় ক্ষতি। লন্ডন থেকে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে বার্তা দিয়েছেন, তাঁর পরিবারের পাশে তিনি আছেন, দল আছে।’’ আর তাঁর পুরনো রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের প্রদেশ সবাপতি অধীর চৌধুরী বলছেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না মান্নানদা নেই। অনেক স্মৃতি ফিরে আসছে!’’

বহরমপুর শহর লাগোয়া শিয়ালমারা গ্রামে জন্ম মান্নান হোসেনের। বস্তুত মুর্সিদাবাদদ জেলাকে যে দু’জন হাতের তেলোর মতো চেনেন, তার এক জন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, অন্য জন অধীরের একদা প্রবল ঘনিষ্ঠ মান্নান হোসেন।

Advertisement

১৯৮৭ সালে মুর্শিদাবাদ বিধানসভা থেকে তিনি কংগ্রেসের প্রতীকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে সাংসদ। ২০০৯ সালেও ফের কংগ্রেসের টিকিটেই জিতে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।

মাঝে, ১৯৯১ সালে জঙ্গিপুর লোকসভায় লড়াই করেও হেরে গিয়েছিলেন। সে নির্বাচনেই ভোটের দিন, বুথের মধ্যে বিরোধীদের আক্রমণে প্রাণসংশয় হয়েছিল তাঁর। কোনও মতে প্রাণে বাঁচেন। ২০০১ সালে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মনোনীত নির্দল প্রার্থী হিসাবে নলকূপ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ফের হেরে যান।

তবে, হেরে গিয়েছিলেন, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে। আর তার পর থেকেই অধীরের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরতে তাকে। মাস কয়েকের মধ্যেই যোগ দেন তৃণমূলে। দলের জেলা সভাপতি হিসেবে কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদে তিনিই তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা দেন।

অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক, বানিজ্যে স্নাতক মান্নান হোসেনকে আম জনতা চিনতেন ‘মান্নানদা’ হিসাবে। চেনেন মাটির কাছাকাছি থাকা রাজনৈতিক নেতা হিসাবে। বহরমপুর কলেজে ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। কলেজে কিছু দিন এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও করলেও পরে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্রপরিষদে। বহরমপুর কলেজের ছাত্রপরিষদের দখলে থাকা ছাত্র সংসদের সহকারি সম্পাদক ছিলেন মান্নান। জেলা ছাত্রপরিষদের সহ-সভাপতির পর রাজ্য যুব কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যুত গুহের আমলে তিনি যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি হন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি, তখনও মান্নান জেলা যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি। ওই সময় তিনি জেলাপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সাল নাগাদ বিবাদের জেরে মমতার সঙ্গে মান্নানের দূরত্ব তৈরি হয়। শিবির বদলে তিনি আশ্রয় নেন সোমেন মিত্রের ছায়ায়।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর নবমীর দিন তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ৪ অক্টোবর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। ১০ নভেম্বর ফিরে গিয়েছিলেন বাড়ি। কিন্তু দিন কয়েক ধরে ফের শরীর বাঙতে তাকে তাঁর। মঙ্গলবার সকালে তাঁকে ফের ফের ভর্তি করানো হয়েছিল হাসপাতালে।

মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, ‘‘দুঃসংবাদ পেয়ে প্রায়ত নেতার পরিবারের লোকজন কলকাতায় গিয়েছেন। তাঁরা কলকাতা থেকে মরদেহ নিয়ে বহরমপুরে নিয়ে আসছেন।’’ আজ, বুধবার সকাল ন’টা নাগাদ শিয়ালমারার বাড়ি থেকে বহরমপুরে দলীয় কার্যালয়ে রাখা হবে মান্নানের দেহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন