Suvendu Adhikari

শহরে থাকলেও আনন্দের ‘হাতেখড়ি’তে না যেতে পারেন শুভেন্দু, মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ এড়াতেই কি?

সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী-বিরোধী দলনেতার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলেই নবান্ন সূত্রে নিশ্চিত করা গিয়েছে। তবে শুভেন্দুর গরহাজিরার সম্ভাবনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:১১
Share:

রাজ্যপালের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী। তাই কী আমন্ত্রণ পেলেও যাবেন না শুভেন্দু ? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যায় খোদ রাজ্যপালের বাংলা ভাষাগত ‘হাতেখড়ি’। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের জন্য আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সব পক্ষই। কিন্তু বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েও সম্ভবত থাকতে পারবেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার তেমনটাই জানা গিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে। তবে কী কারণে রাজভবনের ওই অনুষ্ঠানে তাঁর না থাকার সম্ভাবনাই বেশি, তা বুধবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। রাজনীতির বৃত্তে যাঁরা ঘোরাফেরা করেন, তাঁদের একাংশের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনের অনুষ্ঠানে থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হওয়া এড়াতেই শুভেন্দুর গরহাজিরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গত নভেম্বরে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও শুভেন্দু গরহাজির ছিলেন। তবে ওই দিনই পরে গিয়ে দেখা করে এসেছিলেন রাজ্যপালের সঙ্গে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার প্রজাতন্ত্র দিবস। একই দিনে সরস্বতী পুজো। রাজভবন আগেই জানিয়েছিল, সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যায় বাংলা ভাষা শেখার জন্য ‘হাতেখড়ি’ হবে রাজ্যপালের। ‘শিশুগুরু’র হাতেই রাজ্যপাল ‘অ-আ-ক-খ’ লেখা শিখবেন। ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাজভবনের তরফে রাজ্যের বিশিষ্টজনেদের কাছে চিঠি গিয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শুভেন্দুকেও। তবে বিরোধী দলনেতার ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গিয়েছে, আমন্ত্রিত হলেও ওই অনুষ্ঠানে সম্ভবত যাবেন না তিনি। যদিও বৃহস্পতিবার কলকাতা শহরেই থাকার কথা বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়কের। তাঁর যাওয়ার কথা মানিকতলায় ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ’-এর সরস্বতী পুজোয়। এ ছাড়াও কলকাতাতেই বহু পুজোয় আমন্ত্রণ রয়েছে। সে সমস্ত জায়গাতেও যেতে পারেন শুভেন্দু।

প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সময়েই বিরোধী দলনেতার আসনে বসেন শুভেন্দু। সেই সময় তাঁকে ঘন ঘন রাজভবনে গিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে দেখা যেত। ধনখড়ের সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে অভিযোগ তুলত তৃণমূল। রাজভবনকে শুভেন্দু ‘রাজনীতির আখড়া’ বানিয়ে তুলছেন বলেও অভিযোগ উঠত। কিন্তু গত অগস্টে দেশের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হয়ে ধনখড় রাজ্য ছেড়ে দিল্লি চলে যান। অস্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে বাংলার দায়িত্ব নেন লা গণেশন। সেই থেকে দৃশ্যতই রাজভবন যাওয়া কমে যায় শুভেন্দুর।

Advertisement

গত নভেম্বরে রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব নেন আনন্দ। ২৩ নভেম্বর তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। বিজেপি অভিযোগ করে, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতা-সহ বিজেপি নেতৃত্বকে বসার জন্য ‘সম্মানজনক আসন’ না দেওয়ায় তাঁরা অনেকে রাজভবনের দরজা থেকে ফেরত চলে গিয়েছেন। যদিও সেই অভিযোগ খণ্ডন করে নবান্ন। ফলে শপথগ্রহণের ওই অনুষ্ঠানে রাজভবনে মুখোমুখি হননি মমতা-শুভেন্দু। তার পরে অবশ্য বিধানসভার শীতকালীন অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতাকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপিতে তাঁর সতীর্থ বিধায়ক অশোক লাহিড়ী, অগ্নিমিত্রা পাল ও মনোজ টিগ্গাকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরেও গিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেই সাক্ষাৎপর্ব ছিল মিনিট চারেকের।

গত ডিসেম্বরেও এক বার মমতা-শুভেন্দুর এক মঞ্চে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয় হাওড়া স্টেশনে। গত ৩০ ডিসেম্বর হাওড়ায় ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’-এর উদ্বোধনী কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা আমন্ত্রিত ছিলেন। আসার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কিন্তু মাতৃবিয়োগের কারণে মোদী আসতে পারেননি। ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। তবে মমতা গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন শুভেন্দুও। কিন্তু বিজেপি কর্মীদের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের কারণে মমতা মূল মঞ্চে ওঠেননি। আর শুভেন্দু ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে এক মঞ্চে। ফলে মুখোমুখি হওয়া হয়নি তাঁদের।

বৃহস্পতিবার সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যাতেও মুখ্যমন্ত্রী-বিরোধী দলনেতার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলেই নবান্ন সূত্রে নিশ্চিত করা গিয়েছে। তবে শুভেন্দুর গরহাজিরার কথা জানিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত বর্তমান রাজ্যপালের ভূমিকায় খুব একটা তুষ্ট নন বিরোধী দলনেতা। ধনখড় জমানায় রাজভবন থেকে যে ভাবে নানা বিষয়ে সমর্থন পেতেন বিরোধীরা, আনন্দের আমলে এখনও পর্যন্ত তা দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশিই, রাজ্যের দায়িত্বে আসার পর থেকে যে ভাবে একের পর এক ইস্যুতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ‘তালে তাল মিলিয়ে চলছেন’ আনন্দ, তাতেও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একটি অংশ খানিকটা ‘হতাশ’। বস্তুত, মঙ্গলবারেই বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত খোলাখুলি আনন্দকে ‘রাজ্য সরকারের জেরক্স মেশিন’ বলে অভিহিত করেছেন। দলীয় নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া স্বপন ওই আক্রমণ করেননি বলেই দলের একাংশের অভিমত। তার সঙ্গেও শুভেন্দুর গরহাজিরার সম্ভাবনাকে জোড়া হচ্ছে।

শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সূত্র এ সব ‘তথ্য’ উড়িয়ে দেননি। আবার মেনেও নেননি। এখন দেখার, ‘বিতর্ক’ এড়াতে শুভেন্দু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজভবনে হাজির হল কিনা। সে হাতেখড়ির আগেই হোক বা পরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন