সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি সব্যসাচী দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।
কখনও তাঁর বাড়িতে এসে লুচি-আলুরদম খেয়ে গিয়েছেন মুকুল রায়। কখনও আবার ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন তিনি। ভোট মিটতে এ বার দলীয় নেতৃত্বকে তীব্র কটাক্ষ করলেন বিধাননগরের মেয়র তথা রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। নাম না করে বুধবার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুকে কটাক্ষ করলেন তিনি।
লোকসভা নির্বাচন মিটতেই মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর দায়িত্ব বাড়িয়েছেন তিনি। সুজিত নিজে বিধাননগরের বিধায়ক। লোকসভা নির্বাচনের ফলে দেখা গিয়েছে, ওই এলাকায় তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে। তার পরই বুধবার সকালে বারাসত আদালতে বাম আমলের একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন সব্যসাচী। ভোটের আগে তাঁকে ব্রাত্য করে রাখা নিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘ভোটের ফলাফল বেরনোর আগে অনেকেই বলেছিলেন পচা আলুকে সরিয়ে রাখতে হয়। তখন মনে হয়েছিল আমি-ই হয়তো সেই পচা আলু। তবে ফলের পরে দেখলাম, পচা আলুই উতরে দিল। টাটকা আলু হড়কে গেল।’’
বিজেপির কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়কে বাড়িতে ডেকে লুচি-আলুরদম খাওয়ানো নিয়ে একসময় দলের রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তা নিয়ে সব্যসাচী বলেন, ‘‘পচা আলু দিয়ে তরকারি করলে তার স্বাদ বোধহয় ভাল হয়। যাঁরা তখন এমন কথা বলেছিলেন, তাঁরা হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি।’’
আরও পড়ুন: নির্বাচন মিটতেই মন্ত্রিসভায় বড়সড় রদবদল করলেন মমতা
লোকসভা নির্বাচনে বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদারকে জেতানোর দায়িত্বে ছিলেন সুজিত বসু। কিন্তু কাকলিকে নিজের এলাকায় এগিয়ে রাখতে ব্যর্থ হন তিনি। অন্য দিকে সব্যসাচীর এলাকায় কাকলি ভাল ভোটই পেয়েছেন। এগিয়ে ছিলেন রাজারহাট-নিউটাউন থেকে। এ নিয়ে সব্যসাচীর কটাক্ষ, ‘‘২৩ হাজার ৬০০ লিড দিয়েছি আমি। অথচ সাড়ে ১৮ হাজারে হেরেছেন একজন। নিজের ওয়ার্ডেও হেরেছেন। তার পরেও প্রোমোশন হয়েছে তাঁর। উনি আবার বারাসাত লোকসভার কাণ্ডারী ছিলেন। যিনি নিজের ওয়ার্ডে জিততে পারেন না, তিনি সারা বাংলার নেতা হন, এটাই এখন ট্রেন্ড। আগামী দিনে সারা ভারতের নেতা হবেন উনি।’’
ভোটের ফলাফল নিয়েও দলের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের ভোট, মানুষের রায়। শুধু সাইরেন বাজিয়ে ঘুরে বেড়ালে যা হওয়ার, তাই হয়।’’
লোকসভা নির্বাচনের পর দলের যে সদস্যরা ঘরছাড়া হয়েছেন, তাঁদের ফেরাতে গতকাল বিশেষ ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ কমিটি গঠন করে তৃণমূল। উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ, নৈহাটির বিধায়ক তথা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি পার্থ ভৌমিক, রাজ্যের মন্ত্রী তথা বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায়, মধ্যমগ্রামের বিধায়ক তথা চেয়ারম্যান রথীন ঘোষ, রাজ্যের মন্ত্রী তথা দমদমের বিধায়ক ব্রাত্য বসু, রাজ্যের মন্ত্রী তথা রাজারহাট-গোপালহাটের বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসু, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু এবং মদন মিত্রকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ওই কমিটি। ওই কমিটিতে তিনি কেন নেই? সব্যসাচী বলেন, ‘‘আমাকে রাখার দরকার পড়েনি বোধহয়। তাই রাখেনি।’’
আরও পড়ুন: ‘শহিদ’ পরিবারের আমন্ত্রণের প্রতিবাদে সিদ্ধান্ত বদল, মোদীর শপথে যাচ্ছেন না মমতা
গত সপ্তাহে বিধাননগরে সব্যসাচীর ওয়ার্ড অফিসে বৈঠক করতে যান কুণাল ঘোষ, অমিতাভ মজুমদার, সজল ঘোষ-সহ আরও অনেকে। সেখানে ‘নবজাগরণ’ নামে একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে এ দিন সব্যসাচী বলেন, ‘‘অবহেলিত, নির্যাতিত এবং পুলিশের দ্বারা অযথা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এই মঞ্চ তৈরি হয়েছে। ২০১১ সালে পরিবর্তন চাই বলে হোর্ডিং লাগিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকেই এখন নেই। তাঁদের একত্রিত করতেই এই উদ্যোগ।’’ তবে এই মঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। লোকসভা নির্বাচন মিটতেই একে একে বিধায়করা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তিনিও কি গেরুয়া শিবিরে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন? এ প্রশ্নের উত্তর সযত্নে এড়িয়ে যান সব্যসাচী।