দলকে কী দিশা, উত্তরে অপেক্ষা

এক গণনাকেন্দ্রের বাইরে গেরুয়া রং মেখে এক বিজেপি কর্মী তখন বলছিলেন, ‘‘দিদির ভাইয়েরা এত দিন কী দাপান দাপিয়েছে! সেটা যদি দিদি চোখ খুলে দেখতেন, তা হলে আর এই ঝড় তাঁকে দেখতে হত না!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১২
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র

তেইশে মে। পরপর বাক্স খোলা হচ্ছে আর উত্তরবঙ্গ জুড়ে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে ধস স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোচবিহার, রায়গঞ্জ বা বালুরঘাটে তা-ও কিছুটা লড়াই দেখা গেল। কিন্তু আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, এমনকি যে আসনটিকে ঘাসফুলের সব থেকে নিশ্চিত কেন্দ্র বলে ধরা হচ্ছিল, সেই জলপাইগুড়িতেও তখন জয়জয়কার বিজেপির। গেরুয়া ঝড়ে ঢেকে গিয়েছে দিগ্বিদিক। বাতাসে উড়ছে গেরুয়া আবির। এত দিন যে তৃণমূল নেতারা দাপিয়ে বেরিয়েছেন মাঠ-ময়দান, তাঁদের খোঁজ মিলছে না। দুপুরের মধ্যে বেশির ভাগের ফোন বন্ধ।

Advertisement

এক গণনাকেন্দ্রের বাইরে গেরুয়া রং মেখে এক বিজেপি কর্মী তখন বলছিলেন, ‘‘দিদির ভাইয়েরা এত দিন কী দাপান দাপিয়েছে! সেটা যদি দিদি চোখ খুলে দেখতেন, তা হলে আর এই ঝড় তাঁকে দেখতে হত না!’’ পরে ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূলের অনেক নেতাই মেনে নিয়েছেন, যে দম্ভের চুড়োয় উঠে পড়েছিলেন দলের ছোট নেতা-কর্মীরাও, এই ফল সেটারই প্রতিবাদে। জনগণ বুঝিয়ে দিয়েছেন, শেষ মারের ওস্তাদ তাঁরাই।

সাফল্য যেমন সব ফাঁকফোকড় বুজিয়ে দলকে এক করে দেয়, তেমনই ব্যর্থতা সামনে আনে দোষারোপের পালাকে। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব অবশ্য নিজের মূল্যায়নের ভিত্তিতেই কাউকে দায়িত্বে বহাল করেছেন, কাউকে সরিয়েছেন। যেমন, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুই পুরনো বা আদি তৃণমূল নেতাকে। কোচবিহারে যুব সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে আনা হয়েছে কার্যকরী সভাপতির পদে। পাহাড়ে লালবাহাদুর রাইকে দেওয়া হয়েছে পূর্ণ দায়িত্ব। বিনয় তামাংদের সঙ্গে তাঁদের সখ্য থাকলেও নিজেদের মতো আন্দোলনের ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। বদলা আনা হয়েছে উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহের জেলা নেতৃত্বেও। সম্প্রতি দার্জিলিং (সমতল) জেলা সভাপতি পদেও তরুণ নেতাকে এনেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

এমন পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গ সফরে এলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে প্রথম বার। যদিও এই সফরের মূল লক্ষ্য চার জেলার প্রশাসনিক বৈঠক, কিন্তু এই মুহূর্তে দল উত্তরবঙ্গে যে নড়বড়ে অবস্থায় আছে, তা নিয়েও তিনি আলোচনা করবেন বলে দলের একটি অংশেরই দাবি। কোথায়, কী দাওয়াই দিলে দলকে আবার চাঙ্গা করা যাবে, সে দিকেও তাঁর নজর থাকবে। তৃণমূলে বরাবরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। ভোটের ফল প্রকাশের পরে জেলা সভাপতিস্তরে বদলা আনার পরেও সেই দ্বন্দ্ব ঘোচেনি।

জলপাইগুড়িতেই কৃষ্ণ কল্যাণীর বিরুদ্ধে উষ্মা জানিয়েছেন আগের ব্লক সভাপতিরা। একই ভাবে কোচবিহারে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের জায়গায় জেলা সভাপতি করা হয়েছে বিনয় বর্মণকে, কার্যকরী সভাপতি পার্থ। কিন্তু এই রদবদলে পার্থের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দূরত্ব ঘুচেছে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে দলের লোকেরাই। আলিপুরদুয়ারেও পুরনো মুখ মৃদুল গোস্বামীকে এনে কি আদৌ চা বলয়ের ভোটব্যাঙ্কে ছাপ ফেলা সম্ভব হবে? পাহাড়ে পুলিশ-প্রশাসনের দাপটের জন্য তৃণমূল সরকারের থেকে মুখ ফিরিয়েছে মানুষ। তারাই বা কতটা শাসকের দিকে ফিরবে?

সমস্যা রয়েছে দল বদল নিয়েও। ফল প্রকাশের পরে অনেক জায়গাতেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা শিবির বদলে বিজেপিতে যাওয়া শুরু করেছিলেন। তবে বেনোজল আটকাতে বিজেপি সেই দলবদলে বাঁধ দেওয়ার পরে এই প্রবণতা কমেছে।

এই সবের মধ্যেই মমতার উত্তরবঙ্গ সফর। সেখানে তিনি নেতা-কর্মীদের প্রতি কী বার্তা দিচ্ছেন, তার জন্যই অপেক্ষায় সকলে। সোমবার এনআরসি বিরোধিতাকে আন্দোলনের অভিমুখ হিসেবে বেঁধে দিয়ে প্রাথমিক কাজটা সারলেন তিনি। বাকিটা জানা যাবে আগামী তিন দিনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন