Manoranjan Byapari and Runa Khatun

তৃণমূলকে আর দু’দিন সময় দিলেন মনোরঞ্জন! মমতার ‘অন্ধভক্ত’ বিধায়কের কাছে অভিষেক শুধুমাত্র যুবনেতা

বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী জানিয়েছেন থানার সামনে, বিডিও আফিসের সামনে বিক্ষোভ করবেন। ‘চাক্কা জ্যাম’ হবে। গ্রেফতার হতেও তিনি রাজি। তবে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৪
Share:

আবার ফেসবুক পোস্ট মনোরঞ্জন ব্যাপারীর। ছবি: ফেসবুক।

৭ জানুয়ারি তিনি ফেসবুক লাইভে আসবেন বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, বিধানসভা কেন্দ্র বলাগড় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করবেন। কিন্তু রবিবার, ৭ জানুয়ারি সকালে একটি ফেসবুক পোস্ট করলেন তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। সেখানে আবারও যুব তৃণমূল নেত্রী রুনা খাতুন-সহ একাংশকে কটাক্ষ করে দলকেও হুঁশিয়ারি দিলেন ‘লেখোয়াড়’ মনোরঞ্জন। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জানিয়েও দলকে ঠিক দু’দিন সময় দিলেন বলাগড়ের বিধায়ক। জানালেন, তার পরেই আন্দোলনে নামবেন।

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে তৃণমূল বিধায়ক বনাম যুব তৃণমূল নেত্রীর বাগ্‌যুদ্ধে সরগরম হুগলির বলাগড়। তাঁরা একে অন্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করছেন, বিষোদ্গার করছেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, বিধায়কের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন যুব নেত্রী। অন্য দিকে, নেত্রীর নামে সমাজমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট করে পরে ক্ষমাভিক্ষা করেছেন বিধায়ক। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব আপাতত মনোরঞ্জনকে তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে যেতে বারণ করেছেন। এই প্রেক্ষিতে আবারও বোমা ফাটালেন তৃণমূল বিধায়ক। রবিবার ফেসবুকে ফের রুনাকে আক্রমণ করে তিনি লেখেন, ‘‘যাঁর বিরুদ্ধে আমার মুখ খোলার কথা ছিল, সেই বালি মাফিয়া, মাটি মাফিয়া, জুয়ার বোর্ড চালানো, গাঁজা পাচারকারী, গরু ব্যবসায়ী (আমার কাছে ছবি তোলা আছে খামারগাছি ঘাটে গরু নিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই ফুলন দেবীর স্বামী— আমাদের মাননীয়া দিদি মমতা ব্যানার্জীর ছবি লাগানো গাড়ি নিয়ে গিয়ে তাঁদের হুমকি দিয়ে টাকা তুলছে। দল চাইলেই সে ছবি আমি পাঠিয়ে দেব।) ও হরেক রকমের দুর্নীতিকারীদের সহায়ক। তাঁরা আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন, কী করে বিধায়ক কার্যালয়ে বসে ফেসবুক লাইফ করি দেখে নেবেন!’’ এর পর মনোরঞ্জন লেখেন, ‘‘সত্যিই দেখে তারা নিয়েছে। রাত ১২টার সময়ে বিধায়ক কার্যালয় ভেঙে চুরে তছনছ করে দিয়েছে। সঙ্গে এক পঞ্চায়েত সদস্যার ঘর বাড়ি ভেঙে দিয়েছে। বেধড়ক মারধর করা হয়েছে তাঁর স্বামীকে। তাঁর পাঁচ বছরের বাচ্চাকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে শক্ত উঠোনের মাটিতে। ছুড়ে আর ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে আমাদের দিদি মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। ধুলোয় ফেলে পা দিয়ে মাড়ানো হয়েছে দলীয় পতাকা। এটা দলের মুখে একটা সজোর চপেটাঘাত।’’

মনোরঞ্জনের ফেসবুক পোস্ট।

এর পর আবারও রুনা-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিধায়ক মনোরঞ্জন। অভিযোগ করেছেন, ওই মারধর, হামলার ঘটনায় থানায় গিয়েও কোনও কাজ হয়নি। মনোরঞ্জনের কথায়, ‘‘এখান থেকে বোঝা যায় তাঁরা কত শক্তিমান! কী ভাবে বলাগড় জুড়ে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছেন।’’ যদিও তার পরেও আমজনতার উপর আস্থা রেখেছেন মনোরঞ্জন। প্রথম বারের বিধায়ক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, তাঁর পদ ওতি তুচ্ছ। তৃণমূল নেত্রী বললে এক মুহূর্তেই তিনি বিধায়ক পদ ‘বিসর্জন’ দেবেন। যদিও তার পরেও তিনি ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। মনোরঞ্জন লিখেছেন, ‘‘আমিও কিন্ত ভোটের লড়াইয়ের ময়দানে থাকব। পারলে আমাকে হারিয়ে দেখাক। আমি কথা দিচ্ছি— আগের চাইতেও বেশি ভোটে জিতে দেখাব।’’ এর পর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে তিনি যুবনেতা বলে সম্বোধন করে লেখেন, ‘‘দিদির প্রতি অনুগত, যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অনুগত মানুষ, যাঁরা আমার সঙ্গে আছেন, তাঁদের ওই ফুলন দেবী আর তাঁর স্বামী, কিছু পোষা গুন্ডার সামনে— সেই হিংস্র হায়নার সামনে ফেলে কিছুতেই পালাবো না। আমি লড়ছি। আর আগামিদিনেও অবশ্যই লড়াই করব।’’ ফেসবুক পোস্টের শেষাংশে মনোরঞ্জন আরও তীব্র এবং আক্রমণাত্মক। তিনি লেখেন, ‘‘দলের দিকে তাকিয়ে দেখব আর একটা- দুটো দিন। সঠিক বিচার না পেলে তার পর দলমত নির্বিশেষে সমস্ত সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করব ‘বলাগড় বাঁচাও’, ‘দুষ্কৃতী হঠাও’, ‘জনজাগরণ আন্দোলন’। তৈরি থাকুন!’’

Advertisement

মনোরঞ্জন জানিয়েছেন মোট সতেরোটি অঞ্চল জুড়ে পদযাত্রা করবেন তিনি। থানার সামনে, বিডিও আফিসের সামনে বিক্ষোভ হবে। ‘চাক্কা জ্যাম’ হবে। বস্তুত, শাসকদলের বিধায়ক হিসাবে মনোরঞ্জনের এই বক্তব্য ‘বৈপ্লবিক’ বলে অত্যুক্তি হবে না। মনোরঞ্জন এ-ও লিখেছেন, তিনি গ্রেফতার হতেও রাজি। কিন্তু এটাই হবে তাঁর ‘এসপার-ওসপার’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন