কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
সংসদে ‘প্রশ্নের বিনিময়ে ঘুষ’কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সিবিআই-কে চার সপ্তাহে চার্জশিট জমা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে লোকপাল। তাকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। আদালত মহুয়ার মামলা গ্রহণ করেছে।
সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বিচারপতি অনিল ক্ষেত্রপাল এবং বিচারপতি হরিশ বৈদন্যাথ শঙ্করের বেঞ্চ মহুয়ার মামলা গ্রহণ করেছে। আগামী শুক্রবার এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত। দিল্লি হাই কোর্টে মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, লোকপালের নিয়ম লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন মহুয়া। যে প্রক্রিয়ায় সিবিআই-কে অনুমতি দিয়েছে লোকপাল, তা ত্রুটিপূর্ণ বলেও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ।
গত বছর লোকপালের নির্দেশের পর মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ছ’মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেয় লোকপালের দফতরে। তদন্তে যা যা উঠে এসেছে, রিপোর্টে তা ব্যাখ্যা করে সিবিআই মহুয়ার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য অনুমতি চেয়েছিল। গত বুধবার লোকপালের পূর্ণ বেঞ্চ সিবিআই-কে চার্জশিট দিতে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মহুয়ার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। নির্দেশিকায় লোকপাল জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ার পরেই সিবিআইয়ের দ্বিতীয় আবেদনটি বিবেচনা করা হবে। তার আগে নয়। লোকপালের নির্দেশ অনুসারে, সিবিআই তদন্ত এবং মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি সম্পর্কে আগে আদালতকে অবহিত করতে হবে।
মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুবাইয়ের শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি সংসদে প্রশ্ন করেছেন। নিশানা করেছেন শিল্পপতি গৌতম আদানিকে। সেই সঙ্গেই জুড়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামও। এই অভিযোগ জানিয়ে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়ে মহুয়াকে সাংসদপদ থেকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছিলেন বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁকে সঙ্গত করেছিলেন মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাই।
তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে নেমে ২৬ জন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলে সিবিআই। প্রমাণ হিসাবে সংগ্রহ করা হয় ৩৮টি নথি। রিপোর্টে তারা জানিয়েছে, ঘুষ নিয়ে সংসদে মোট ৬১টি প্রশ্ন করেছিলেন মহুয়া। তার মধ্যে তিনটি প্রশ্ন করা হয়েছিল সামনাসামনি, অফলাইন মাধ্যমে। বাকি প্রশ্নগুলি অনলাইনে আপলোড করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ মিলেছে বলে রিপোর্টে দাবি করে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
লোকসভার গত মেয়াদের শেষ পর্বে মহুয়ার সাংসদপদ খারিজ করেছিল সংসদের এথিক্স কমিটি। যদিও ২০২৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে কৃষ্ণনগর থেকে পুনরায় জিতে সাংসদ হয়েছেন মহুয়া। মহুয়ার দায়ের করা মামলায় শুক্রবারের শুনানিতে দিল্লি হাই কোর্টে কী হয়, সে দিকে নজর থাকবে।