Sougata Roy

Sougata Roy: ফের ‘জুতো পেটার’ নিদান সৌগতের মুখে

সৌগতবাবুর এমন ‘কুকথা’ বর্ষণ চলছে কিন্তু দলের তরফে প্রকাশ্যে তাঁর রাশ টানা হচ্ছে না কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২২ ০৬:৪৪
Share:

সৌগত রায়।

শাসক দলে অনুব্রত মণ্ডলের মতো দাপুটে নেতারা যখন বিরোধী বা পুলিশকে একের পর হুমকি দিতেন, সেই ‘কুকথা’র সমালোচনা শোনা যেত তাঁর মুখে। দলের মধ্যেই তাঁকে ধরা হত ‘ভদ্রলোকের স্বর’ হিসেবে। অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরে বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের জনাকয়েক স্থানীয় নেতা যখন বিরোধীদের পিঠের চামড়া তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, তখনও তিনি ‘কুকথা’র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। অথচ সেই তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের মুখেই এখন প্রায় প্রতিদিন ‘কুকথা’! বিরোধীদের হুঙ্কার না দিয়ে কোনও বক্তৃতাই শেষ হচ্ছে না তাঁর। বারবার তঁর মুখে ফিরে আসছে জুতো পেটার কথা। সমালোচনার মুখে কখনও তিনি বলছেন উত্তেজনার বশে বেশি বলা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেই আবার বলছেন!

Advertisement

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অনুষ্ঠানে রবিবার ডানলপে যেমন সৌগতবাবুর মুখে শোনা গিয়েছে, ‘‘সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের যদি কেউ থাকেন, তাঁদের হুঁশিয়ারি দিয়ে গেলাম। আপনারা যদি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ না করেন, তা হলে এর পরে যদি আপনাদের কেউ জুতো-পেটা করে, তা হলে দুঃখ করবেন না!’’ কামারহাটিতে শনিবারই বলে এসেছিলেন, তৃণমূলকে ‘চোর’ বলে আক্রমণ করলে এলাকায় থাকতে পারবেন না বিরোধীরা। তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা এ দিন বলেছেন, “দলের মধ্যে কেউ যদি অসামাজিক কাজকর্ম করেন, তা হলে তা প্রমাণিত হলে তিনি অবশ্যই শাস্তি পাবেন। যেমন পার্থ চট্টোপাধ্যায় শাস্তি পেয়েছেন। পাশাপাশি দোষ প্রমাণিত না হলে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের যাঁরা ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ বলছেন, তাঁরা ছাড় পাবেন না।’’ তার পরেই জুতো পেটার নিদান! আগেই তিনি বলেছিলেন, বিরোধীদের পিঠের চামড়া তুলে জুতো বানানো হবে।

বিরোধীদের উদ্দেশে সৌগতবাবুর এমন ‘কুকথা’ বর্ষণ চলছে কিন্তু দলের তরফে প্রকাশ্যে তাঁর রাশ টানা হচ্ছে না কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও। সৌগতবাবুর এ দিনের ভাষণ যেখানে, তারই লাগোয়া তৃণমূলের নেতা ও মুখপাত্র তাপস রায়ের বিধানসভা এলাকা। তাপসবাবুর বক্তব্য, ‘‘সৌগতদা বর্ষীয়ান নেতা। সামনাসামনি তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রকাশ্যে এই নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’’

Advertisement

আপাতত বিরোধীরা হুমকি-কুকথার সমালোচনায় সরব। বসিরহাটে এ দিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সৌগত-প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘এর থেকে পরিষ্কার, তৃণমূল এক জন অধ্যাপককে হার্মাদ বানিয়ে দিতে পারে! কে কখন জেলে ঢুকে যাবে, বুঝতে পারছে না বলে প্রচণ্ড চাপে আছে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল একটা চোরেদের দল। বালি, কয়লা, অবৈধ লটারি খেলিয়ে মানুষকে সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, সৌগতবাবুর মধ্যে দুষ্কৃতীর মনোভাব বাড়ছে। উনি নিজেই বলেছেন, তৃণমূলের ৯৫% সৎ, ৫%-র জন্য বদনাম হচ্ছে। পঞ্চায়েত থেকে ধরলে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধির সংখ্যা এখন প্রায় ৫০ হাজার। তার ৫% মানে আড়াই হাজারের তালিকাটা উনি দিয়ে দিন! তা হলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘চোর (তৃণমূল সম্পর্কে) বলা হচ্ছে বলে উনি খুব চটেছেন। চোরের কোন প্রতিশব্দ ব্যবহার করা যাবে, উনিই বলে দিন। দুষ্কৃতী, পাচারকারী, লুম্পেন কী বলা হবে, বলে দিন!’’ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘অনুব্রতদের বেলায় সৌগতবাবু বিবেকের স্বর শোনাতেন! এখন এ সব বলছেন। তৃণমূল কেন লোকের কাছে জুতো খাচ্ছে, সৌগতবাবু ভালই জানেন। আর উনি যা হুমকি দিচ্ছেন, তার জবাবও মানুষ দিয়ে দেবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement