তৃণমূলের দ্বন্দ্বে তপ্ত গড়বেতা, মহিলা-সহ নিহত তিন

এলাকা দখল ঘিরে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর লড়াই। তাতেই তেতে উঠল গড়বেতার একাড়িয়া। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ গেল এক তৃণমূল কর্মীর। পাল্টা হিসেবে কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হলে পুড়ে মারা যান এক বৃদ্ধ। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে টাঙির কোপে প্রাণ গিয়েছে বৃদ্ধের বৌমারও।

Advertisement

বরুণ দে

গড়বেতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

নিহতের পরিজনের হাহাকার। শুক্রবার গড়বেতার একাড়িয়া গ্রামে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

এলাকা দখল ঘিরে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর লড়াই। তাতেই তেতে উঠল গড়বেতার একাড়িয়া। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ গেল এক তৃণমূল কর্মীর। পাল্টা হিসেবে কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হলে পুড়ে মারা যান এক বৃদ্ধ। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে টাঙির কোপে প্রাণ গিয়েছে বৃদ্ধের বৌমারও।

Advertisement

শুক্রবার সকাল থেকে হামলা-পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আগরা পঞ্চায়েতের একাড়িয়া। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সাড়ে ছ’টা নাগাদ গ্রামের মল্লিকপাড়ায় বাজারের যাওয়ার সময় আক্রান্ত হন তৃণমূল কর্মী সিরাজ ওরফে সেরা মল্লিক (৪২)। ১০-১২ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপর চড়াও হয়। তাঁর বুকে গুলি করা হয়। লুটিয়ে পড়েন সিরাজ। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

সিরাজের মৃত্যুর খবর ছড়াতেই পাল্টা হামলা হয় একাড়িয়ার মণ্ডলপাড়ায়। জনা তিরিশেক লোক দল বেঁধে গিয়ে পরপর চারটি বাড়িতে আগুন দেয়। তারই একটিতে পুড়ে মারা যান তৃণমূল সমর্থক আলম মণ্ডল (৬৫)। ঘরে শ্বশুরমশাই পুড়ছেন দেখে ছুটে এসেছিলেন বৃদ্ধের মেজ বৌমা আসমা বিবি (৩৬)। হামলাকারীদের টাঙির কোপ পড়ে আসমার মাথায়। মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁরও। এ দিন দফায় দফায় সংঘর্ষে জখম ১২ জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল এবং গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

এই ঘটনা যে দলীয় কোন্দলের জের, তা পরোক্ষে মানছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির ব্যাখ্যা, “ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা আগে সিপিএম করত। পরে তৃণমূলে আসে। এরাই অশান্তি করছে।” একই সুরে গড়বেতার তৃণমূল বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী বলেন, “কিছু লোক দলে থেকে দলকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। এ সব রেয়াত করা হবে না।” রাত পর্যন্ত অবশ্য কেউ গ্রেফতার হয়নি। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের ফোন বেজে গিয়েছে। এসএমএসের জবাব আসেনি। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “একাড়িয়ার ঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হামলাকারীদের খোঁজ চলছে। গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসেছে।’’

পাশাপাশি গ্রাম আউসবাঁধি ও একাড়িয়া। এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা আকবর খান ও সুলজার মণ্ডলের বিরোধ রয়েছে। আকবর ও সুলজারের দলীয় পদ নেই। তবে আকবর তৃণমূলের গড়বেতা ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষের ঘনিষ্ঠ। আর সুলজারের পরিচয় দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি দিলীপ পালের অনুগামী হিসেবে। স্থানীয় সূত্রে খবর, সেবাব্রত আর দিলীপের প্রশ্রয়েই বাড়বাড়ন্ত আকবর ও সুলজারের। ব্লকে আবার সেবাব্রত এবং দিলীপের বিরোধ রয়েছে। সেই সূত্রেই আকবর-সুলজারের দ্বন্দ্ব। দু’পক্ষই চায় এলাকার রাশ হাতে রাখতে। তা হলেই পঞ্চায়েতের কাজে ঠিকাদারির বখরা থেকে তোলাবাজি, সব করা যায় সহজে।

বৃহস্পতিবার রাতে আউসবাঁধিতে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। সেই অশান্তি বেশি দূর না গড়ালেও শুক্রবার ভোর হতেই আকবর অনুগামী সিরাজ খুন হন। তার পাল্টা হিসেবে চারটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় সুলজারের লোকজন। মারা যান আলম ও আসমা। আকবর ও সুলজার ঘটনার পরই এলাকা ছেড়েছেন। আর তৃণমূলের বর্তমান ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ও প্রাক্তন ব্লক সভাপতি দিলীপ, দু’জনেরই বক্তব্য, ‘‘দলের কিছু খারাপ লোক গোলমাল করেছে। দলই ব্যবস্থা নেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন