Suvendu Adhikari Rajib Banerjee

শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামে প্রার্থী প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব? বিধানসভা নির্বাচনের পরিকল্পনায় তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে তেমনই ভাবনাচিন্তা

গত বিধানসভা ভোটের আগে রাজীব তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। পদ্মশিবিরের প্রার্থীও হয়েছিলেন তাঁর পুরনো কেন্দ্র ডোমজুড়ে। কিন্তু পরাজিত হন। তবে ভোটের কয়েক মাসের মধ্যেই অভিষেকের হাত ধরে তৃণমূলে ফিরেছিলেন রাজীব।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:০৯
Share:

(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করতে চায় তৃণমূল। তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে এই মর্মে ভাবনাচিন্তা চলছে। সে ভাবনার কথা ইতিমধ্যে রাজীবের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। যদিও বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করায় রাজীব দাবি করেছেন, তাঁকে কেউ কিছু বলেননি। তিনি এমনকিছু জানেনও না। তাঁর কথায়, ‘‘আমায় কেউ কিছু বলেননি। আমি জানিও না। এই প্রথম শুনলাম।’’ রাজীবের বক্তব্য, এর পুরোটাই ‘রটনা’।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গত বেশ কয়েকদিন ধরে রাজ্যের সমস্ত জেলার ব্লক ধরে ধরে বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে নেতানেত্রীদের নিয়ে বৈঠক করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু জেলার বৈঠক হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলির বৈঠক হয়ে যাবে ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। বাকি থাকবে একটিমাত্র বিধানসভা কেন্দ্র। নন্দীগ্রাম। গোটা একটি দিন রাখা হয়েছে নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লকের জন্য। সূত্রের খবর, ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনও একটি দিন ওই বৈঠক হতে পারে। যা থেকে স্পষ্ট যে, নন্দীগ্রামকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে শাসকদল। সেই সূত্রেই এখন থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। রাজীবের নামও এসেছে সেই নিরিখেই।

কিন্তু রাজীব কেন? প্রথমত, নন্দীগ্রামে তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে। বারংবার বলেও তা মেটানো যায়নি। ফলে সেখানে তৃণমূল এমন কাউকে প্রার্থী করতে চায়, যাঁর সঙ্গে স্থানীয় স্তরের রাজনীতির নিবিড় কোনও সম্পর্ক নেই। প্রসঙ্গত, যেখানে গোষ্ঠীকোন্দল তীব্র এবং প্রার্থিপদের একাধিক দাবিদার থাকে, সেখানে বাইরের কাউকে প্রার্থী করা বা কোনও ‘তারকা’ মুখকে ভোটে দাঁড় করানো তৃণমূলের পুরনো কৌশল। দ্বিতীয়ত, নন্দীগ্রামের স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মধ্যে এমন কোনও ‘ওজনদার’ নাম নেই, যাঁকে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামানো যায়। সে দিক থেকে রাজীবের একটা পরিচিতি রয়েছে। তৃতীয়ত, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তমলুক লোকসভায় দলের পর্যবেক্ষক ছিলেন রাজীব। তৃণমূলের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের ভোটে রাজীব বাড়তি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নন্দীগ্রাম তমলুক লোকসভার মধ্যেই। দু’বছর আগে তমলুকের দায়িত্ব পালনের সুবাদে কোলাঘাট থেকে হলদিয়া পর্যন্ত সব এলাকায় রাজীব প্রচুর সাংগঠনিক বৈঠক করেছিলেন। বস্তুত, জনসভার তুলনায় এলাকায় এলাকায় বৈঠকেই বেশি নজর দিয়েছিলেন। ফলে ব্লক স্তরের নেতাদের সঙ্গে তিনি আগে থেকেই পরিচিত। এলাকার রাজনীতির ‘জটিলতা’ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। তমলুকে দেবাংশু হেরে গিয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। হারের পরে দলের অন্দরে ‘অন্তর্ঘাত’-এর অভিযোগ করেছিলেন দেবাংশু। দলের মতে, সে সব একেবারে ‘ভিত্তিহীন’ ছিল না। তবে সার্বিক ভাবে রাজীবের ভূমিকায় সন্তুষ্টই ছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।

Advertisement

রাজীবকে নন্দীগ্রামে দাঁড় করানোর এই ভাবনা থেকে এটিও স্পষ্ট যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ সালের ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়াবেন না। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। ভোটগণনায় নাটকীয় সব ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত ১,৯৫৬ ভোটে জয়ী হন বিজেপির শুভেন্দু। যদিও নন্দীগ্রামের ভোটগণনা নিয়ে মামলা হয়েছিল হাই কোর্টে। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন।

হিসাব বলছে, গত লোকসভা ভোটের নিরিখে নন্দীগ্রাম বিধানসভায় তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে প্রায় ৯ হাজার ভোটে। সেই সূত্রেই অনেকের বক্তব্য, রাজীবে লড়াই কঠিন। বিরাট কিছু ওলটপালট না-হলে তাঁর জেতা দুষ্কর। তবে সেই বিষয়টিও দলের বিবেচনায় রয়েছে। রাজীব নন্দীগ্রামে মাটি কামড়ে লড়াই দিয়ে হেরে গেলেও তাঁকে ভবিষ্যতে ‘সম্মানজনক পুনর্বাসন’ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের। অনেকের মতে যা ‘ইন্দ্রনীল সেন মডেল’। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইন্দ্রনীলকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। হার নিশ্চিত জেনেও লড়েছিলেন ইন্দ্রনীল। হেরেছিলেন গোটা রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যবধানে। কিন্তু ২০১৬ সালে চন্দননগর থেকে বিধানসভায় জিতিয়ে এনে ইন্দ্রনীলকে তাঁর মন্ত্রিসভায় জায়গা দিয়েছিলেন মমতা।

গত বিধানসভা ভোটের আগে রাজীব তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। পদ্মশিবিরের প্রার্থীও হয়েছিলেন তাঁর পুরনো কেন্দ্র ডোমজুড়ে। কিন্তু পরাজিত হন। ভোটের কয়েক মাসের মধ্যেই অভিষেকের হাত ধরে তৃণমূলে ফিরেছিলেন। তার পরে তাঁকে একটা বড় সময় ত্রিপুরার দায়িত্বে রাখা হয়েছিল। যাকে কারও নাম না করে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ বলে উল্লেখ করেছিলেন অভিষেক। তবে ত্রিপুরাতেও রাজীব দায়িত্ব পালনে ধারাবাহিকতা দেখিয়েছিলেন। কয়েক মাস আগে তাঁকে হাওড়া জেলা পরিষদে মেন্টরের দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।

ঘটনাচক্রে, ২০২১ সালের ভোটের আগে শুভেন্দুর ডাকেই বিজেপিতে গিয়েছিলেন রাজীব। পাঁচ বছর পরে সেই রাজীবকে সেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই প্রার্থী করার ভাবনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে। দল বললে কি তিনি নন্দীগ্রামে দাঁড়াবেন? এই প্রশ্নর জবাব ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে দেননি রাজীব। বলেছেন, ‘‘দিদি আমাকে আমার জেলায় (হাওড়া) মেন্টর করেছেন। আগামী দিনে দেখতে পাবেন আমি কোথায় দাঁড়াব। নন্দীগ্রামে আমার দাঁড়ানোর খবর পুরোটাই রটনা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement