রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে সমর্থনের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে বিজেপি বিরোধী বৃহত্তর জোটের পথ কি প্রশস্ত করলেন মমতা? জল্পনা শুরু রাজনৈতিক শিবিরে। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
কংগ্রেসকে প্রায় সরাসরি জোটবার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্যসভা নির্বাচনে বাংলার পঞ্চম আসটিতে কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে সমর্থন করবে তৃণমূল— দলের কোর কমিটির বৈঠক থেকে ঘোষণা করে দিলেন মমতা নিজেই।
অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে কংগ্রেস যে এ রাজ্য থেকে টিকিট দিচ্ছে, তা এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। রাহুল গাঁধী এবং অধীর চৌধুরীর মধ্যে হওয়া আলোচনার ভিত্তিতে আজ সকালেই স্থির হয়েছে, এ রাজ্যে একটি আসনে লড়বে কংগ্রেস এবং সেই আসনে টিকিট দেওয়া হবে সিঙ্ঘভিকে।
কংগ্রেস আনুষ্ঠানিক ভাবে সে কথা এখনও না জানালেও সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সিঙ্ঘভির প্রার্থী হওয়ার খবর। তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘোষণা করে দেন, সিঙ্ঘভিকে সমর্থন করবে তাঁর দল। এর আগে অবশ্য তৃণমূল জানিয়েছিল, রাজ্যসভা নির্বাচনে পাঁচটি আসনেই তারা লড়বে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আজ নজরুল মঞ্চে কোর কমিটির বর্ধিত সভা ডেকেছে তৃণমূল। সেই মঞ্চ থেকেই তৃণমূল চেয়ারপার্সন এ দিন রাজ্যসভা নির্বাচনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, চারটি আসনে তৃণমূল লড়বে, প্রার্থী হবেন নাদিমুল হক, শুভাশিস চক্রবর্তী, আবির বিশ্বাস এবং শান্তনু সেন।
পঞ্চম প্রার্থীর নাম আর ঘোষিত হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, পঞ্চম আসনে কংগ্রেস প্রার্থীকেই সমর্থন দেবে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণার ফলে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল।
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ
আরও পড়ুন: সরলেন বুদ্ধ-শ্যামলেরা, বয়স কমাল সিপিএম
ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে সদ্য বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপি। ত্রিপুরা বিজয়ের প্রভাব এ রাজ্যেও পড়তে চলেছে, দাবি গেরুয়া শিবিরের। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বান, বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রুখতে এ রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও সক্রিয় হোক। ত্রিপুরা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের উপরে বিরক্তিই প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জোটের প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও রাহুল গাঁধী ত্রিপুরায় তৃণমূলের হাত ধরতে রাজি হননি, জানান মমতা। যদি ত্রিপুরায় জোট গড়ে লড়ত কংগ্রেস-তৃণমূল, তা হলে ফল অন্য রকম হত বলে সে সময় তিনি দাবি করেন। বামেরাও ত্রিপুরায় বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’কে রুখতে এ রাজ্যেও বামেদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান মমতা।
আরও পড়ুন: বিজেপি বধ তৃতীয় ফ্রন্টে, দাবি মমতার
বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস এবং এবং বামেদের সক্রিয় হতে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত কয়েক দিন ধরে যে ভাবে বার বার মুখ খুলছিলেন, তাতে সমঝোতার জল্পনা বাড়ছিল। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে কি কংগ্রেস এবং বামেদেরও সঙ্গে নিতে প্রস্তুত মমতা? এমন প্রশ্নও উঠছিল। নজরুল মঞ্চ থেকে শুক্রবার মমতার ঘোষণা বুঝিয়ে দিল, বৃহত্তর রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে তুলতে অত্যন্ত আগ্রহী তিনি।
সামনেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্যই এ দিন নজরুল মঞ্চে সভা ডেকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভা থেকেই রাজ্যসভা নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করলেন। সেই সভা থেকেই জানিয়ে দিলেন, পঞ্চম আসনে কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেও কি কংগ্রেসকে কোনও বার্তা দিয়ে রাখতে চাইলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী? রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা এখন তা নিয়েও।