জলপাইগুড়ির ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ২৩টি শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের ডাকা ধর্মঘটে মঙ্গলবার ডুয়ার্স-তরাইয়ের সিংহভাগ চা বাগানে কাজ হয়নি। এই ‘সাফল্য’ সামনে রেখে নিজেদের উজ্জীবিত করতে চাইছে বিরোধীরা। আজ, বুধবার সার্বিক ধর্মঘটে সাড়া মিললে বাম ও কংগ্রেস নেতারা চা বলয়ে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন এ দিনের ধর্মঘটকে ‘আংশিক সফল’ বলে দাবি করেছে।
যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক তথা জলপাইগুড়ি জেলা সিটু সম্পাদক জিয়াউল আলম বলেন, “তৃণমূলের অনেক চা শ্রমিক ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। তাই ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।” কংগ্রেস-প্রভাবিত এনইউপিডব্লুর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভবিষ্যতে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে জোরদার আন্দোলন হবে।” প্রবীণ চা শ্রমিক নেতা চিত্ত দে বলেন, “এই আন্দোলন আশার আলো দেখাচ্ছে।”
রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে কংগ্রেস ও বাম মনোভাবাপন্ন চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ ভাবে ধর্মঘট ডাকার ঘটনা এই প্রথম। চা শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে পরপর ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে, কিন্তু লাভ হয়নি। চা শিল্পে ন্যূনতম মজুরি প্রথা চালু করতে রাজ্য আন্তরিক নয়, এই অভিযোগ তুলে দু’দিনের চা শিল্পে ধর্মঘট এবং এক দিনের সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে যৌথ মঞ্চ। শাসকদল তৃণমূল বন্ধের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমেছে। তা সত্ত্বেও ধর্মঘটে ‘সাড়া’ মেলায় আশান্বিত বাম ও কংগ্রেসের নেতারা।
কতটা সাড়া মিলল? মঙ্গলবার প্রথম দিনের চা শিল্পের ধর্মঘটে ৯০ শতাংশেরও বেশি চা বাগানে কাজ হয়নি, বলে মালিক সংগঠনের কনসালটেটিভ কমিটির তরফে জানানো হয়েছে। স্তব্ধ ছিল ডুয়ার্স-তরাই-পাহাড়ের আড়াইশোরও বেশি চা বাগান। এতে ২৫ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মালিকপক্ষ।
ডুয়ার্সে এবং তরাইতে যে চা বাগানগুলিতে তৃণমূলের সংগঠন রয়েছে, সেখানে কিছু শ্রমিক বিক্ষিপ্ত ভাবে কাজ করলেও, বাগানের কারখানা বন্ধ ছিল বলে জানা গিয়েছে। গত কয়েক দিন চা বলয়ে লাগাতার বন্ধ-বিরোধী প্রচার চালানোর পরে, এ দিনের ধর্মঘটকে ‘আংশিক সফল’ বলে মন্তব্য করতে হয়েছে তৃণমূল নেতাদের। তৃণমূল টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরিী সভাপতি অলোক চক্রবর্তী বলেন, “ধর্মঘট আংশিক সফল। এতে কিছু প্রমাণিত হয় না। শ্রমমন্ত্রীর কথা না শুনে ধর্মঘট ডেকে বাম ও কংগ্রেস চা বলয়ে প্রাসঙ্গিকতা হতে মরিয়া। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি নিয়ে শুধু রাজনীতি করাটা দুর্ভাগ্যজনক।”
পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই চা বলয়ে তৃণমূলের কিছুটা প্রভাব বাড়ে। লোকসভা ভোটের ফলে চা বাগানে ‘ঘাসফুল ফুটেছে’ বলে দাবি করা হয়। চা বাগান অধ্যুষিত আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি দুই লোকসভা আসনই শাসকদলের ঝুলিতে যায়। এই প্রথম বিরোধীদের কর্মসূচীর চাপে পড়ল শাসক দল।