নারদ-ঘুষ কাণ্ডে অভিযুক্ত দলীয় সাংসদদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত সাংসদদের নির্বাচনী প্রচার থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারদ-বিদ্ধ সাংসদরা তো বটেই, দীনেশের এই অবস্থান ভাল ভাবে নেননি খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যার ফলে ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে মঙ্গলবার সতর্ক করে দিল তৃণমূলের সংসদীয় বোর্ড। আর এতে বড় ভূমিকা নিলেন নারদ-বিদ্ধ সাংসদরাই! দীনেশকে আপাতত সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ভবিষ্যতে একই অভিযোগ উঠলে সাসপেন্ড করার কথা ভেবে রেখেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
আগামী সপ্তাহে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফল বেরোবে। ফল নিয়ে এমনিতেই শাসক দলের অন্দরে যথেষ্ট টেনশন রয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দলের একাংশের ক্ষোভ। প্রচার পর্বেই ছোট-বড় বহু নেতা দল নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন। ভোটে বিপর্যয় হলে বিরোধী স্বর যে আরও বাড়বে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন মমতা। এই পরিস্থিতিতে আজ তড়িঘড়ি দীনেশের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে প্রকারান্তরে সব বিরুদ্ধ স্বরকেই বার্তা দিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, দীনেশকে নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতার নির্দেশেই দলীয় সাংসদদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক ডেকে ব্যবস্থা নিতে বলা
হয় তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
সেই মতো আজ দুপুরে তৃণমূলের লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের কাছে নির্দেশ যায়। ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল দীনেশ। তাঁর কথায়, ‘‘বৈঠকে থাকার জন্য কোনও নির্দেশ আসেনি আমার কাছে।’’ সূত্রের খবর, বৈঠকে সৌগত রায় জানান, রাজ্যে যখন নির্বাচন চলছে তখন দলের এক সাংসদ সেন্ট্রাল হলে অন্য দলের সাংসদদের কাছে বলছেন যে, বিধানসভা ভোটে তৃণমূল হারছে! তখন সুদীপ জানান, ওই সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক। উনি একাধিক জায়গায় দল সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কু-কথা বলছেন। এটা দলবিরোধী। দলনেত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে, কারও কোনও অসন্তোষ থাকলে তা দলের মধ্যেই বলতে হবে। ওই সতর্কবার্তা না শোনায় প্রাথমিক ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওই সাংসদকে সর্তক করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে একই ধাঁচের অভিযোগ উঠলে শাস্তি দেওয়া হবে।
বিধানসভা ভোটে টিকিট বণ্টন নিয়ে দীনেশের সঙ্গে দলের মতপার্থক্য শুরু। সূত্রের খবর, দীনেশের লোকসভা এলাকার মধ্যে অন্তত তিনটি কেন্দ্রে তাঁর পছন্দের প্রার্থীরা টিকিট পাননি। সেই ক্ষোভে সে ভাবে প্রচারও করেননি দীনেশ। ঘনিষ্ঠ মহলে একাধিক বার জানিয়েছেন, তাঁর লোকসভা এলাকায় তৃণমূলের ফল খারাপ হবে। ভোটের দিন হালিশহরে সায়ন্তিকা বলে একটি শিশুর মার খাওয়ার ঘটনায় তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় তোলেন তিনি। তবে তৃণমূলের অন্দরে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ জমা হয়েছে, নারদ-ঘুষ কাণ্ডে দীনেশ প্রকাশ্যে মুখ খোলায়। দলের বক্তব্য, খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়ানোর বদলে দীনেশ উল্টে নারদে অভিযুক্ত সাংসদদের প্রচারে বেরোতে মানা করেন। যা মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি দল। আজ ঘটনাচক্রে নারদ কাণ্ডে অভিযুক্তরাই দীনেশের শাস্তি ঘোষণার রায়কে পূর্ণ সমর্থন করেন।
সুদীপবাবুর বক্তব্যের পর মুখ খুলে মুকুল জানান, দলে বিভ্রান্তি ছড়ানোয় ওই সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুপুরে শাস্তির সিদ্ধান্ত হলেও রাত পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি দীনেশকে। সূত্রের খবর, আগামিকাল দীনেশকে মৌখিক ভাবে এটা জানিয়ে দেবেন সুদীপবাবু।