চাপটা আসছিল দিন কয়েক ধরে।
কখনও ফোনে, কখনও রাত বিরেতে মোটরবাইক দাপিয়ে বাড়ি বয়ে এসে তারা জানিয়ে যাচ্ছিল— ‘‘আপনাদের দায়িত্ব তো আমাদের, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে শেষ মুহূর্তে আবার বেঁকে বসবেন না! তা হলে কিন্তু...।’’
হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেসে কলকাতা পাড়ি দেওয়ার ঘণ্টা কয়েক আগেও তাঁরা জানিয়ে দিয়েছিলেন ‘আর যাই হোক কংগ্রেস ছাড়তে পারব না।’ তা হলে শেষ মুহূর্তে ট্রেন চেপে বসলেন কেন? বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যের সঙ্গে কলকাতা যাওয়া দুই মহিলা কাউন্সিলর-সহ তিন কংগ্রেস জনপ্রতিনিধি দাবি করেছেন, তৃণমূলে যোগ দিতে তাঁদের এমনই ‘চাপা সন্ত্রাসের’ মুখে পড়তে হয়েছিল।
দক্ষিণ কলকাতার শরৎ বসু রোড এবং সল্টলেকে যুবভারতী স্টেডিয়ামের কাছে একটি তিন তারা হোটেলে দিন দুয়েক ধরে কার্যত ‘বন্দি’ থাকার পরে ওই তিন জন রবিবার যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তবে শনিবার রাতে টেলিফোনে তাঁদের মধ্যে অনেকেই কবুল করেছেন, ‘‘চাপটা এমন জায়গায় গিয়েছিল যে, দল না বদলালে যা কিছু হতে পারত!’’
গলায় তখনও ভয় তাঁদের। এক মহিলা কাউন্সিলর বলছেন, ‘‘বহরমপুর পুরসভার এক কাউন্সিলরের স্বামী পরিচিত সমাজবিরোধী। এক সময়ে কংগ্রেসের হয়েই একাধিক খুন-জখমের ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। মাসকয়েক আগে জামিন পাওয়ার পরেই দেখা গেল, তিনি শাসক দল তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বাহুবলী হয়ে উঠেছেন!’’ ওই কাউন্সিলর জানান, বাড়ি বয়ে এসে ওই পরিচিত সমাজবিরোধী শাসিয়ে গিয়েছিলেন, নির্দিষ্ট দিনে ট্রেনে না উঠলে বিপদ আছে কিন্তু!
অন্য এক মহিলা কাউন্সিলর বলছেন, ‘‘শুধু আমার নয়, বারবার বলা হচ্ছিল পরিবারের ক্ষতি করে দেওয়া হবে!’’ এ ক্ষেত্রেও অভিযোগের তির ওই পরিচিত সমাজবিরোধীর দিকেই। দলবদল করা এক কাউন্সিলর ছিলেন পূর্ব কলকাতার একটি হোটেলে। তাঁর দাবি, ‘‘স্ত্রী-পুত্রের ক্ষতি করে দেওয়া হবে বলে ক্রমাগত শাসাচ্ছিল ওরা (তৃণমূলের আশ্রয়ে থাকা সমাজবিরোধীরা)। এমনকী, তৃণমূলের এক জেলা নেতা পুলিশ ‘লেলিয়ে’ দেওয়ার প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছিলেন।’’
আর এক কাউন্সিলর কলকাতা থেকে ফোনে জানান, ‘‘তৃণমূলে যোগ দিচ্ছি কিছুটা বাধ্য হয়েই। না হলে রোজ রাতে টেলিফোন করে যে ভাবে আমাকে ভয় দেখানো হত, এক সময়ে বাধ্য হয়েই যোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে দিলাম’।’’
তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বের তরফে মুর্শিদাবাদ জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য দাবি করেছেন, পুলিশের ভয়ে বা অর্থের প্রলোভনে শাসক দলে যোগ দেওয়ানো হচ্ছে— এই অভিযোগ কোনও ভাবেই ঠিক নয়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘নীতির কথা অধীর চৌধুরীদের মুখে মানায় না! বালির বাঁধ ভেঙে গিয়েছে আসলে। গোটা বহরমপুর এখন তৃণমূলময় হয়ে গিয়েছে।’’