সবংয়ে বিপুল জয় তৃণমূলের, দ্বিতীয় সিপিএম

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বস্তি দিয়ে সবংয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে সিপিএম। গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনের পরে এ যাবৎ সব উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে নেমে যাচ্ছিল বামেরা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০২
Share:

জয়ের পরে সবংয়ে মানস ভুঁইয়া।

রাজ্যের শাসক দলের জন্য বড়দিনের উপহার! সাড়ে তিন দশকের কংগ্রেস গড়ের পতন ঘটিয়ে সবং বিধানসভা কেন্দ্রের দখল নিল তৃণমূল। তাদের জয়ের ব্যবধান যেমন বিরাট— ৬৪ হাজার ১৯২। তেমনই ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে তৃণমূলের বাক্সে প্রায় ৫১%।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বস্তি দিয়ে সবংয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে সিপিএম। গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনের পরে এ যাবৎ সব উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে নেমে যাচ্ছিল বামেরা। নিজেদের ভোটবাক্সে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পারলেও এ বার কিছুটা অন্তত সম্মান রক্ষা হয়েছে তাদের! আবার মমতার জন্য একই সঙ্গে অস্বস্তির তথ্য বিজেপি-র উত্থান। সবংয়ে তৃতীয় স্থান পেলেও আগের তুলনায় প্রায় ১৫% ভোট বেড়েছে বিজেপি-র। যে ‘সাফল্যে’ উৎসাহিত হয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে সবংবাসীকে কৃতজ্ঞতা ও বিজেপি কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন!

পঞ্চায়েত ভোটের আগে সবং উপনির্বাচনে বিপুল জয় নিঃসন্দেহে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে তৃণমূলকে। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘২০১৬ সালে বিরোধীরা একজোট হয়ে সবংয়ে যা ভোট পেয়েছিলেন, এ বার একক ভাবে আমাদের প্রাপ্ত ভোটের হার তার চেয়ে বেশি। এর পরে কংগ্রেসকেই ঠিক করতে হবে, তারা সিপিএম-বিজেপি’র পিছনে থাকবে? না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে সামিল হবে?’’ প্রসঙ্গত, সবংয়ে জামানত হারিয়ে কংগ্রেস নেমে গিয়েছে চতুর্থ স্থানে! আর স্ত্রীর জয়ে উল্লসিত তৃণমূল সাংসদ মানস ভুঁইয়া মন্তব্য করেছেন, ‘‘বিরোধীরা পঞ্চায়েতে প্রার্থী খুঁজে পাবে না!’’

Advertisement

সবং বিধানসভা ভোট ২০১৬

দল প্রার্থী ভোট শতাংশ

কংগ্রেস মানস ভুঁইয়া ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৮৭ ৫৯.০২

তৃণমূল নির্মল ঘোষ ৭৭ হাজার ৮২০ ৩৬.৩

বিজেপি কাশীনাথ বসু ৫ হাজার ৬১০ ২.৬

* মানস ভুঁইয়া ৪৯ হাজার ১৬৭ ভোটে জয়ী

পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে সবংয়ে মানসবাবু পেয়েছিলেন ৫৯% ভোট। এ বার তৃণমূল প্রার্থী, তাঁর স্ত্রী গীতারানি ভুঁইয়া পেয়েছেন ৫০.৯% (প্রায় ৫১)। কিন্তু মানসবাবু যেখানে জিতেছিলেন ৪৯ হাজার ১৬৭ ভোটে, গীতাদেবীর জয়ের ব্যবধান সেখানে ৬৪ হাজার ১৯২! গত বছরের বিধানসভায় তৃণমূল সবংয়ে পেয়েছিল ৩৬% ভোট। জোট ছাড়া শেষ বার চতুর্মুখী লড়াই হয়েছিল ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে। সে বার তৃণমূল এই বিধানসভা এলাকায় তৃতীয় স্থানে ছিল ৩০% ভোট পেয়ে। আর তখন বাম ও কংগ্রেস, উভয় পক্ষেরই ভোট ছিল ৩২% করে। যা তারা এ বার ধরে রাখতে পারেনি।

রক্তক্ষরণের ধাক্কা সামলেও বামেরা পেয়েছে ২০.১% ভোট। তাদের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলে বিজেপি-র প্রাপ্তি ১৮%। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, প্রায় ১২৮টি বুথে কাউকে দাঁত ফোটাতে দেয়নি তৃণমূল। তার থেকে যা ফল হওয়ার, হয়েছে! সিপিএম প্রার্থী রীতা মণ্ডল জানার প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিশ্বাসঘাতকতার জয়! সবংয়ের সব মানুষ এই রায় দেননি। বাইক বাহিনী দিয়ে ভোট লুঠের পরিণাম দেখা যাচ্ছে।’’ দ্বিতীয় স্থানকে সামনে রেখে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পঞ্চায়েত ভোটের আগে আরও বেশি প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। আবার বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘সন্ত্রাস আর ছাপ্পার ভোটে আমরা আড়াই থেকে ১৮%-এ পৌঁছেছি!’’

কংগ্রেস ছাড়া আর সব পক্ষের জন্যই স্বস্তির কিছু কারণ রেখেছে সবং!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন