Midnapore College

স্যার, ঘড়ি ধরে কলেজে আসুন! ফরমান ছাত্রদের

শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা যাতে সময় মতো কলেজে আসেন, তার জন্য নির্দেশিকা জারির দায়িত্ব এ বার নিজের কাঁধে তুলে নিল ছাত্ররা। রীতিমতো লিখিত ফরমান পাঠিয়ে তারা শিক্ষকদেরও তাতে সই করে দিতে বলল।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৭
Share:

শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা যাতে সময় মতো কলেজে আসেন, তার জন্য নির্দেশিকা জারির দায়িত্ব এ বার নিজের কাঁধে তুলে নিল ছাত্ররা। রীতিমতো লিখিত ফরমান পাঠিয়ে তারা শিক্ষকদেরও তাতে সই করে দিতে বলল।

Advertisement

ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের নাড়াজোল রাজ কলেজের।

গত শুক্রবার কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের সভাপতির সই করা নির্দেশিকা শিক্ষকদের কাছে পৌঁছেছে। তাতে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক কলেজের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের বেলা ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে। আজ, মঙ্গলবার এই বিষয়টি নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন কলেজের টিচার ইনচার্জ রণজিৎ খালুয়া। সোমবার তিনি বলেন, “টিএমসিপি এ ভাবে চিঠি দিতে পারে না। বৈঠকে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

Advertisement

এই চিঠির কথা শুনে বিস্মিত রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এমন চিঠি পাঠানোর অধিকার কে দিয়েছে? এটা ঠিকই যে জেলাস্তরে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সরকার সেখানে শৃঙ্খলা কায়েম করতে চাইছে। কিন্তু ছাত্রদের তো কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি! এটা ওদের কাজও নয়। ওদের মাতব্বরি করতে কে বলেছে?’’ সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংসদের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘কোথাও ছাত্র সংসদের তরফে এ রকম আচরণ হলে অধ্যক্ষদের উচিত সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি শিক্ষা দফতরের নজরে আনা। শিক্ষাঙ্গনে কোনও বেচাল বরদাস্ত করবে না সরকার।’’

টিএমসিপি-র পক্ষ থেকে এই চিঠিতে সই করেছেন নাড়াজোল কলেজের তৃণমূল ইউনিট সভাপতি প্রলয় সিংহ। কেন তিনি এই চিঠি লিখলেন? প্রলয়ের জবাব, “পড়াশোনার মান স্বাভাবিক রাখতেই ওই চিঠি দিয়েছি।” টিএমসিপির জেলার কাযর্করী সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীও বলেন, “বহু শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী সময়মতো কলেজে আসেন না। তাই লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।” কিন্তু শিক্ষকদের সময়ানুবর্তিতা শেখানোর অধিকার ছাত্ররা পেল কী করে? কলেজের এক শিক্ষক বলেন, “দশ বছরেরও বেশি শিক্ষকতা করছি। আগে কোনও দিন এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। ওরা চিঠিটির উপরে আমাদের সই করতে বলল। ভয়ে সই করে দিয়েছি। প্রতিবাদ করার পরিবেশ তো নেই।” শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের একাংশের মধ্যে রীতিমতো ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে এই ঘটনায়।

এই ভীতির প্রসঙ্গ টেনেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী এ বার কি বুঝতে পারছেন, বিজ্ঞাপন দিয়েও কেন কলেজের অধ্যক্ষ পদে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না? ছাত্র সংগঠনের এই ভূমিকা শিক্ষক সমাজের মর্যাদায় আঘাত করার সমান।’’ ওই কলেজেরই এক ছাত্র নেতা অনুপম ভুঁইয়া আবার দাবি করেছেন, “চিঠিতে কিছু শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে। তাই তাঁরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে আসল ঘটনাটি চাপা দিতে চাইছেন। আমরা শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশের পরই ওই চিঠি দিয়েছি।”

খোদ শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে কড়া অবস্থান নিলেও টিএমসিপি-র এই কাজে তেমন কিছু ভুল দেখছেন না কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি ও দাসপুরের তৃণমূল বিধায়ক মমতা ভুঁইয়াও। তাঁর বক্তব্য, “শিক্ষকরা কখন আসবেন, তা নিয়ে ছাত্র সংসদ আবেদন করতেই পারে। এতে অন্যায় কী আছে?’’ ঠিক একই কথা শুনিয়েছেন তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভাপতি কৃষ্ণকলি বসু (ঘোষ)। তিনি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে পঠনপাঠনের বিষয়ে কথা বলার অধিকার ছাত্রদের আছে। এতে অন্যায়টা কোথায়?’’

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য নেতৃত্ব এ ব্যাপারে কী বলছেন? টিএমসিপি রাজ্য সভাপতি জয়া দত্ত বলেন, ‘‘ওরা কী লিখেছে, কেন লিখেছে কিছুই জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন