পুলিশ তাঁকে খুঁজে পাচ্ছে না।
অথচ তাঁর মোবাইল ফোন খোলা। চাইলে কথাও বলা যাচ্ছে।
শান্তিপুর কলেজে ঢুকে শিক্ষকের মাথায় পিস্তল ঠেকানোর মামলায় যাঁর নাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি হইচই হচ্ছে, সেই টিএমসিপি নেতা মনোজ সরকারের সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যাতেও কথা হল আনন্দবাজারের।
আনন্দবাজার: মনোজ, আপনি এখন কোথায়?
মনোজ: আপনি কে বলছেন?
আনন্দবাজার: আপনি কোথায়?
মনোজ: আপনি নিজের পরিচয়টা একটু দিন না...
আনন্দবাজার: আপনি কি কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে?
মনোজ: সেটা বলা ঠিক হবে না।
আনন্দবাজার: নদিয়া জেলায়, না তার বাইরে?
মনোজ: (থমকে গিয়ে) তা ধরুন, জেলার একটু বাইরে...
আনন্দবাজার: আপনাকে নিয়ে তো খুব হইচই হচ্ছে, আপনি কি আত্মসমর্পণ করবেন?
মনোজ: (একটু চুপ করে থেকে) করতেই হবে?
আনন্দবাজার: পুলিশ তো আপনাকে খুঁজছে...
মনোজ: হুমম... দেখি...
আনন্দবাজার: কবে?
মনোজ: (একটু ইতস্তত করে) দু’এক দিনের মধ্যে ধরা দিতে পারি।
(ফোন কেটে যায়)
ঘটনাচক্রে, এ দিনই কলকাতার সায়েন্স সিটিতে এক অনুষ্ঠানে এই হামলা প্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুনলাম, এক জন এখনও ধরা পড়েনি। যাতে সে তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’
শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের শিক্ষা অধিকর্তা নিমাইচন্দ্র সাহা এ দিন শান্তিপুর কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী-সহ সকলের সঙ্গে কথা বলেন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘যারা এই ঘটনায় যুক্ত, তারা কে কোন দলের, সেটা বড় প্রশ্ন নয়। যারা অরাজকতা করছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’
গত সোমবার শান্তিপুর কলেজের স্টাফরুমে শিক্ষক অমরজিৎ কুণ্ডুর উপরে হামলার পরে অধ্যক্ষ পুলিশের কাছে যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, তাতে অবশ্য মনোজ বা অন্য কারও নাম ছিল না। কিন্তু অধ্যক্ষের ঘরে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে মনোজ এবং তার বেশ কিছু সঙ্গী-সাথিকে চড়া গলায় শাসাতে দেখা যায়।
সোমবার রাতে মনোজ আর বাড়ি ফেরেননি। পরের দিন সকালে ফিরেই মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে যান। তার পর থেকেই তিনি বেপাত্তা। মঙ্গলবার সকালেই চার জনকে তুলে এনেছিল শান্তিপুর থানার পুলিশ। টানা জেরার পরে রাতে সাহাবুদ্দিন শেখ নামে এক রাজমিস্ত্রি এবং সুদীপ বিশ্বাস নামে কলেজের এক প্রাক্তন ছাত্রকে অস্ত্র আইনে গ্রেফতার করা হয়। অবৈধ অনুপ্রবেশ ও খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বুধবার রানাঘাট আদালতে তোলা হলে তাদের দু’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু শুধু দু’জন তো নয়। অন্তত জনা কুড়ি স্টাফরুমে ঢুকেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। বাকিরা
কোথায়? যে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ, সেটিই বা উদ্ধার করা যাচ্ছে না কেন?
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, কিছু নাম তদন্তে উঠে এসেছে। তার মধ্যে কয়েক জনকে সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগই বহিরাগত (কলেজের ছাত্র নয়) এবং মনোজের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। কয়েক জন এর আগেও অস্ত্র আইনে বা অন্য নানা গোলমালে জড়িয়ে গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ এদের খুঁজছে। মনোজের বাড়িতেও হানা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর ঘরে তালা ঝুলছে। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তাঁর হদিস জানার চেষ্টা হচ্ছে।
চাইলেই যাঁর মোবাইলে কথা বলা যাচ্ছে, দু’দিন ধরে তাঁর হদিস পাচ্ছে না পুলিশ? এটা কি বিশ্বাস্য? নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া শুধু বলেন, ‘‘আমি এ সব নিয়ে একটি কথাও বলব না।’’