শ্রমিককে বাঁচাতে কুয়োয় ঝাঁপ যুবকের

আচমকা এই দুর্ঘটনায় গর্তের উপরে থাকা তিন শ্রমিক তখন দিশাহারা। সেই সময় ওই এলাকা দিয়ে পাণ্ডুয়া থানায় যাচ্ছিলেন সুনীল। তিনি পেশায় গাড়ি-চালক। পরিস্থিতি দেখে পাশের হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে লম্বা পাইপ নিয়ে তিনি গর্তে ঝাঁপ দেন।

Advertisement

সুশান্ত সরকার

পাণ্ডুয়া শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪৪
Share:

সিধু হেমব্রম ও সুনীল সিংহ

নিকষ অন্ধকারে হঠাৎ আলো, হঠাৎ হাওয়া!

Advertisement

কুয়ো কাটতে গিয়ে প্রায় ১৮ ফুট গর্তের নীচে মাটি ধসে যাওয়ায় নাক পর্যন্ত চাপা পড়ে গিয়েছিল এক শ্রমিকের। দমবন্ধ হয়ে তিনি যখন মৃতপ্রায়, তখনই মিলল অক্সিজেন! লম্বা পাইপ নিয়ে ওই গর্তে লাফিয়ে পড়ে তাঁর মুখে গুঁজে দিয়ে প্রাণ ফেরালেন এক অচেনা যুবক।

সোমবার, জন্মাষ্টমীর সকালে পাণ্ডুয়ার নিয়ালা এলাকার মাঝেরপাড়ায় এ ভাবেই প্রাণ ফিরে পেয়ে সিধু হেমব্রম নামে ওই শ্রমিক বলেন, ‘‘মরেই যেতাম। আমার পুনর্জন্ম ঘটালেন ওই যুবক। ওঁকে কোনও দিন ভুলব না।’’ মগরার বাসিন্দা, সুনীল সিংহ নামে বছর সাতাশের ওই যুবকের বিনয়ী উত্তর, ‘‘মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকার কথা বলেন আমার মা। সেটাই করেছি।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন মাঝেরপাড়ায় জনৈক আব্দুল কাফিজের হার্ডওয়্যারের দোকানের পাশে কুয়ো খোঁড়া হচ্ছিল। সেখানেই কাজ করছিলেন খন্যান থেকে আসা সিধু-সহ চার শ্রমিক। সিধু গর্ত কেটে বালতি করে মাটি তুলছিলেন। বাকি তিন জন উপরে দাঁড়িয়ে সেই মাটি সরিয়ে রাখছিলেন। হঠাৎই ধস নামে। সিধুর কথায়, ‘‘প্রায় ১৮-১৯ ফুট গর্ত খোঁড়ার পরে মাটি চাপা পড়ে যাই। দমবন্ধ হয়ে আসছিল।’’

আরও পড়ুন:পরীক্ষা ছাড়াই ছাড়পত্র পাচ্ছে বিদেশি ওষুধ

আচমকা এই দুর্ঘটনায় গর্তের উপরে থাকা তিন শ্রমিক তখন দিশাহারা। সেই সময় ওই এলাকা দিয়ে পাণ্ডুয়া থানায় যাচ্ছিলেন সুনীল। তিনি পেশায় গাড়ি-চালক। পরিস্থিতি দেখে পাশের হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে লম্বা পাইপ নিয়ে তিনি গর্তে ঝাঁপ দেন। পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেন পেয়ে সিধু কিছুটা ধাতস্থ হন। খবর পেয়ে পুলিশ পাশের ইটভাটা থেকে জেসিবি মেশিন এনে কুয়োর চারপাশের মাটি কেটে ওই শ্রমিককে উদ্ধার করে। পাণ্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সিধুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ চুঁচুড়া থেকে দমকলের গাড়ি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয়। ততক্ষণে অবশ্য ওই কুয়োর গর্ত বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। মাতামাতি শুরু হয়ে গিয়েছে সুনীলকে
ঘিরে। শেখ আতাউর রহমান মণ্ডল নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘আজকের দিনে এক যুবক নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যের প্রাণ বাঁচাতে পারেন, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না।’’

তবু একা কৃতিত্ব নিতে চাননি সুনীল। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ, সাধারণ মানুষ, সকলের চেষ্টায় সিধু বেঁচেছেন। আমি একা কৃতিত্ব নেব কেন?’’

গ্রামবাসীরা এ কথা মানেননি। সুনীল তাঁদের ‘নায়ক’ হয়ে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন