ফাইল চিত্র।
ছ’মাসে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছেন ২৪ জন। নেতাদের খেয়োখেয়ি রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন নিয়ে অসন্তোষও রয়েছে।
এই আবহে আজ, বৃহস্পতিবার হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারকেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়ে তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজে বৈঠক করবেন তিনি। তার আগে পাশের মাঠে হবে প্রশাসনিক সভা। বীরভূম, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনার পরে হুগলিতে এসে মুখ্যমন্ত্রী কী বার্তা দেন, তা নিয়ে পুলিশ প্রশাসন এবং তৃণমূল শিবিরের অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। কোন প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী কাকে বিঁধবেন, ভেবে দিশা পাচ্ছেন না কেউ।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরূপ প্রশ্ন এড়াতে অবশ্য আগেভাগেই মাঠে নেমেছে জেলা পুলিশ। গত কয়েক মাসে জেলা সদর চুঁচুড়া-সহ নানা প্রান্তে যে ভাবে দুষ্কৃতী-তাণ্ডব বেড়েছে, তাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিছুদিন আগেই রাতের অন্ধকারে বলাগড়ে প্রকাশ্যে বাহুবলীদের গুলির লড়াই দেখে শিউরে উঠেছিলেন সাধারণ মানুষ। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে অবশ্য তল্লাশিতে জোর দেয় পুলিশ।
পুলিশের দাবি, ইতিমধ্যে ১১৭ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে। ৫১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৯টি বোমা এবং ১১৩টি অন্য অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে বলাগড়, চুঁচুড়া আর শ্রীরামপুর থানা এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি (২১টি) আগ্নেয়াস্ত্র মিলেছে। তবু, এর পরেও স্বস্তিতে নেই পুলিশ। গত বছরই চুঁচুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী চুঁচুড়ার আইসি-কে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আপনার এলাকায় ‘ক্রাইম’ বাড়ছে কেন?’’ তার পরেও চুঁচুড়ায় দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য বাগে আসেনি। ফলে, ফের মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে পুলিশকর্তাদের। পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, জেলা পুলিশের অন্য এক কর্তা ঠারেঠোরে স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁরা চাপে রয়েছেন।
চাপে রয়েছেন জেলা তৃণমূলের কিছু নেতাও। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার সতর্ক করা সত্ত্বেও দলে গোষ্ঠী-কোন্দল বন্ধ হয়নি। যে তারকেশ্বরে বৈঠক, সেখানকারই পুরপ্রধান স্বপন সামন্তের সঙ্গে উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডুর বিবাদ তৃণমূলের সকলের জানা। একই রকম ‘সম্পর্ক’ সিঙ্গুর-হরিপালের দুই বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য-বেচারাম মান্না এবং জাঙ্গিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ মহিনুদ্দিন (বুধো) এবং সহ-সভাপতি দেবেন সাহারও। ফলে, তাঁদের বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ।
এ ছাড়া রয়েছে জেলার কিছু এলাকায় উন্নয়ন নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। গোঘাটে পানীয় জলের সঙ্কট মেটেনি। জেলায় সাতটি কর্মতীর্থ প্রকল্প হলেও একটিও চালু হয়নি। এতদিনেও খানাকুলে কিসান মান্ডি বা আইটিআই কলেজ না-হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেখানকারই এক তৃণমূল নেতা। জেলা বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘আজ মুখ্যমন্ত্রী যে মন্দিরে পুজো দেবেন, সেখানকার দুধপুকুরের দূষণ এখনও রোধ করা গেল না। তারকেশ্বরকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্রও সেই তিমিরে।’’