বাঙালির হৃদয়ে পথের পাঁচালির স্মৃতি আজও অটুট। —নিজস্ব চিত্র।
অপুর ছেলেবেলা বাঙালির কাছে এক নস্টালজিয়া। আজ, বুধবার সত্যজিত্ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’র ৬০ বছর পূর্তি। ছবি মুক্তির দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মেদিনীপুরে এক কর্মসূচি হবে। উদ্যোক্তা মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটি। আলোচনা সভার পাশাপাশি ছবিটি প্রদর্শিতও হবে।
ফিল্ম সোসাইটি কর্তৃপক্ষের মতে, একটা বাংলা আঞ্চলিক ছবি কী ভাবে আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রশংসা পেতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে ‘পথের পাঁচালি’। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সত্যজ্যোতি অধিকারীর কথায়, “সত্যজিত্ রায়ের এই ছবিটির ৬০ বছর পূর্তি হচ্ছে। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই আয়োজন।”
ছবিটির শ্যুটিং শুরু হয় ১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর। মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালের ২৬ অগস্ট। সেই সময়ে ‘পথের পাঁচালি’ মুক্তি পেয়েছিল কলকাতা ও শহরতলির ৯টি প্রেক্ষাগৃহে। সময়ের থেকে কিছুটা যেন এগিয়েই তৈরি হয়েছিল ছবিটি। অপু- দুর্গার রেল দেখা, দুর্গার মৃত্যু, সর্বজয়ার কান্না, ছবির ঘটনাক্রমগুলো বাঙালির মনে যেন গেঁথে গিয়েছে। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কৌশিক নন্দী বলছিলেন, “পথের পাঁচালি ছবিটা অন্য রকম। কত মানুষ, কত দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা, সিনেমাটা দেখার পরে এ সব ভাবায়। ছবিটা যদি কেউ মন দিয়ে দেখে তাহলে বাঙালি মনকে বুঝতে সমস্যা হবে না।”
মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তের কথায়, “অনেকবার ছবিটা দেখেছি। ছবি দেখলাম, না উপন্যাস পড়লাম, এটা মনকে ভাবায়।” পরিচালক সত্যজিত্ রায়ের সিনেমায় হাতেখড়ি এই ছবির মাধ্যমেই। পরে আরও কত ছবি করেছেন। সেই সব ইতিহাস।
দেখতে দেখতে সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ পার করেছে মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটি। ১৯৬৩ সালে মেদিনীপুরে গড়ে ওঠে এই সোসাইটি। সোসাইটি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সেই সময়ে কলকাতার বাইরে মেদিনীপুরের মতো মফস্সল শহরে এমন সংস্থা ছিল না। ঠিক কবে সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় তা অজানা। তবে যেটা জানা তা হল ওই বছরের অগস্টে তত্কালীন জেলাশাসক শিবপ্রসাদ সমাদ্দারের বাংলোতেই সোসাইটির উদ্যোগে প্রথম সিনেমা দেখানো হয়। সেই সময়ে সোসাইটির নিজস্ব ভবন ছিল না। পরে অবশ্য রবীন্দ্রনগরে নিজস্ব ভবন গড়ে ওঠে। সংস্থার উদ্যোগে মাঝে-মধ্যেই নানা কর্মসূচি হয়। শিশু চলচ্চিত্র উত্সব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উত্সব প্রভৃতি হয়। সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবেরও আয়োজন হয়েছিল।
সোসাইটির অন্যতম সদস্য সিদ্ধার্থ সাঁতরার কথায়, “চলচ্চিত্র উত্সবে আমরা কিছু ভাল ছবিই দেখানোর চেষ্টা করি। যেগুলো প্রশংসিত। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে ইরান, তুরস্কের মতো দেশের সিনেমা দেখানো হয়েছে। এ পার বাংলা- ওপার বাংলা চলচ্চিত্র উত্সবে দুই বাংলার কিছু ভাল সিনেমা দেখানো হয়েছে।” সিদ্ধার্থবাবুর কথায়, “পথের পাঁচালি সত্যিই কালজয়ী ছবি। ছবিটা দেখলে এখনও অনেকেই একটু স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। মুখ-চোখের ভাষা একেবারে পাল্টে যায়।”
‘পথের পাঁচালি’ আজও প্রাসঙ্গিক। তাই বইয়ের দোকানে এই বই বিক্রি হয়। ছবি মুক্তির ৬০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে বুধবার সন্ধ্যায় সোসাইটির নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে আলোচনা সভা হবে। থাকবেন বিশিষ্টরা। সভা শেষে ছবিটি প্রদর্শিতও হবে। ‘পথের পাঁচালী’র সঙ্গে মেদিনীপুরের সরাসরি কোনও যোগ নেই। তাতে কি? ‘পথের পাঁচালী’ তো আম বাঙালির। সীমার মধ্যে যে অসীম, তাকে কোনও ভূগোলেই বেঁধে রাখা যায় না। সিদ্ধার্থবাবু বলছিলেন, “ছোট্ট অপু, দুর্গা, সর্বজয়া- ছবিটার কথা ভাবলে অনেক কিছুই মনে পড়ে যায়। ঠিক উপন্যাসের মতো।”