এনজেপি স্টেশন থেকে দার্জিলিং-সিকিমের যে এলাকার ভাড়া ৩ হাজার টাকা, তা নেওয়া হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বিমানবন্দর থেকে একই দূরত্বের জন্য কখনও ৬ হাজার টাকাও দর হাঁকা হচ্ছে। গরমে পর্যটকদের ভিড় বাড়তেই কৃত্রিম গাড়ি-সঙ্কট দেখিয়ে এ ভাবে পর্যটকদের থেকে দু-তিন গুণ বেশি ভাড়ায় আদায়ের অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়িতে।
কেউ সঠিক ভাড়া চাইলে এক শ্রেণির দালালদের চাপের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে, এনজেপি, বাগডোগরায় নেমে প্রায় রোজই হয়রান হতে হচ্ছে পর্যটকদের অনেককে। অভিযোগ পৌঁছেছে খোদ পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের কাছেও। শনিবার রাতে পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ‘‘এনজেপি, বাগডোগরায় বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে আমি অভিযোগ পেয়েছি। রবিবার শিলিগুড়ি ফিরব। তারপরেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করব।
পর্যটকরা যাতে কোনও ভাবে হয়রান না হয় তা দেখতে হবে। তার জন্য বাড়তি টাকা আদায় রুখতে কড়া পদক্ষেপ করব।’’
পর্যটন দফতরের একটি সূত্র বলছে, এনজেপি, বাগডোগরা কিংবা তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস এলাকায় প্রতিবার পর্যটন মরসুমে রাতারাতি গাড়ির সঙ্কট তৈরি করে একটি চক্র। আগাম ‘বুকিং’ ছাড়া যে পর্যটকরা গন্তব্যে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করতে যান, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন।
যেমন, শনিবার এনজেপিতে নেমে গ্যাংটক যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করতে গিয়ে মাথায় হাত পড়ে যায় শ্রীরামপুরের সোনালি মুখোপাধ্যায়দের। ওদের ৩টি পরিবার ঘুরতে গিয়েছেন। প্রথমেই একটি বড় গাড়ি ভাড়া করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, একজন গাড়ি চালক ৪ হাজার টাকায় রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকজন তাঁরা উপর চড়াও হয়। ওই গাড়ির চালককে পিছু হটিয়ে দেয় তারা। এর পরে তারা এগিয়ে এসে জানায়, গাড়ির সঙ্কট রয়েছে। তারপরেই ওই সোনালিদেবীদের ৫ হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া নিতে প্রায় বাধ্য করে।
একই দিনে বাগডোগরায় নেমে দার্জিলিঙে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া নিতে গিয়ে শুভ্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী চিত্রিতাকেও দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়।
চিত্রিতা বলেন, ‘‘বাগডোগরা থেকে দার্জিলিং পৌঁছে দিতে ৩ থেকে সাডে ৩ হাজার টাকাই যথেষ্ট। কিন্তু, আমাদের সঙ্গে ৬ হাজার টাকা দিয়ে দরাদরি শুরু করে গাড়ি নেই জানিয়ে ৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।’’
নানা মহলের থেকে অভিযোগ পেয়েছে ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল জানান, তাঁরা গোটা বিষয়টি পর্যটন মন্ত্রীকে জানিয়ে হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘গাড়ি তো কম নেই। তবুও সঙ্কট দেখিয়ে বাড়তি টাকা আদায় করার চেষ্টা হলে পর্যটকরা এক দিন মুখ ফিরিয়ে নেবেন। আমরা সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীরও হস্তক্ষেপ চাইব।’’