প্রশাসনিক খরচ কমানোর আলোচনা করতে গিয়েই সরকারি কাজের দরপত্র (টেন্ডার) পদ্ধতিতে একাধিক ‘দুর্বলতা’ খুঁজে পেল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার নবান্নের বৈঠকে আর্থিক লোকসান ঠেকাতে অবিলম্বে সেই দুর্বলতা দূর করার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, কখনও কখনও দরপত্রে একটির বেশি সংস্থা অংশগ্রহণ করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে সংস্থার দেওয়া প্রস্তাবিত দরের তুলমূল্য বিচার করা সম্ভব হয় না। আধিকারিকদের একাংশের দাবি, দরপত্রের অংশগ্রহণে যোগ্যতা সংক্রান্ত কিছু নিয়ম বেশির ভাগ সংস্থার সামনে বাধা তৈরি করে।
বেশি সংখ্যক সংস্থা দরপত্রে অংশ নিলে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে প্রকল্পের ন্যূনতম দর যাচাইয়ের সুযোগ পাওয়া যাবে বলে মনে করছে সরকার। সরকারের সিদ্ধান্ত, দরপত্র ২০ কোটি টাকার বেশি হলে তা অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে ‘ডিপিআর’ কমিটির কাছে। একশো কোটির বেশি হলে লাগবে মুখ্যসচিবের সম্মতি।
বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছিল, উপযুক্ত সংখ্যায় দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার বা বিশেষজ্ঞ থাকার পরেও প্রকল্পের জন্য বেসরকারি পরামর্শদাতা সংস্থাকে কেন নিয়োগ করে বিভিন্ন দফতর? সরকারের নির্দেশ, সেই কাজ করতে হবে দফতরের ইঞ্জিনিয়ার এবং বিশেষজ্ঞদেরই।
সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও গুণমান যাচাই করতে ‘ফিজিক্যাল অডিট’ এবং ‘টেকনিক্যাল অডিটে’র উপর জোর দিয়েছেন মুখ্যসচিব মলয় দে। এরই পাশাপাশি, সরকারি অনুষ্ঠান যতটা সম্ভব অনাড়ম্বর করার উপর জোর দিয়েছে নবান্ন। অতিথিদের জন্য এলাহি খাবার, দামি উপহার, ফুল, উত্তরীয়র জন্য হওয়া বিপুল খরচে রাশ টানতে বলা হয়েছ। যথেচ্ছ ভাবে এবং বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার কমানোর উপর জোর দিয়েছে সরকার।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকার সক্রিয় বলেই এত কাজ হচ্ছে। আরও সক্রিয় হতে হবে। সরকারের টাকা মানেই মানুষের টাকা। এখানে বিলাসিতার জায়গা নেই। সরকারি খরচের চুলচেরা বিশ্লেষণ, প্রশিক্ষণ এবং কাউন্সেলিং হবে। বৃহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করছি। যে টাকা বাঁচাতে পারব, তা মানুষের কাজেই লাগবে।’’
এই বৈঠক থেকেই খরচ নিয়ন্ত্রণ শুরু করল সরকার। অতীতের বৈঠকগুলির মধ্যাহ্নভোজে একাধিক রকমের মাছ, মাংস এবং হরেক রকম পদের সম্ভার থাকলেও এ দিনের আয়োজন ছিল নামমাত্র। আধিকারিকদের জন্য দুপুরের খাবারে ছিল ভাত, ডাল, শুক্তো, আলুভাজা, তরকারি, দই মাছ, চাটনি, পাঁপড়, দই এবং মিষ্টি।