প্রতীকী ছবি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গকে ভালই টেক্কা দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত!
তবে এ টেক্কা অন্য। কেন্দ্রীয় সরকারেরই সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যত খরচ করতে হয়, গুজরাতের গ্রামে সেই খরচটা তুলনায় অনেক বেশি। এমনকী গোটা দেশের মধ্যে গুজরাতের গ্রামবাসীদেরই চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বেশি খরচ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে ওই রিপোর্ট। কাকতালীয় ভাবে, গুজরাতের ভোটপর্ব শুরুর মুখেই প্রকাশিত হয়েছিল এই পরিসংখ্যান।
কেন্দ্রের ‘সেন্ট্রাল ব্যুরো অব হেলথ ইন্টেলিজেন্স’-এর ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গুজরাত ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, অসম, মধ্যপ্রদেশের মতো বেশ কিছু রাজ্যের চেয়েই পশ্চিমবঙ্গে হাসপাতালে ভর্তির খরচ কম। অর্থনীতিবিদেরা বলেন, রাতারাতি কোনও মানুষকে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত স্তরে নামিয়ে আনার অন্যতম কারণ হতে পারে চিকিৎসার খরচ। কোনও সরকার এই খরচে রাশ টানতে পারলে তা বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হয়। স্বভাবতই অনেকে মনে করছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের এই রিপোর্ট অক্সিজেন দিতে পারে মমতা সরকারকে। পাশাপাশি, বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপান-উতোরের আবহেও সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন তৃণমূল নেত্রী। রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যেমন বললেন, ‘‘আমাদের মতো সরকারি ক্ষেত্রে সমস্ত চিকিৎসা ‘ফ্রি’ আর কোথাও নেই। গুজরাতের নেতার মুখেই শুধু বড়-বড় কথা। কিন্তু তাঁদের এই কাজ করার মানসিকতা, পরিকল্পনা বা মন— কোনওটাই নেই।’’
রিপোর্ট বলছে, সারা দেশের নিরিখে এক জন রোগীর হাসপাতালে ভর্তির গড় খরচ গ্রামাঞ্চলে গড়ে ১৭ হাজার টাকা এবং শহরাঞ্চলে মোটামুটি ২৬ হাজার টাকা। সরাসরি চিকিৎসার খরচ এবং তার আনুষঙ্গিক খরচ— দু’টিই এর অন্তর্ভুক্ত। গুজরাতে এই খরচ রোগী পিছু ৩২ হাজার টাকারও বেশি। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হলে সাড়ে ১০ হাজার টাকার মতো গড়ে খরচ হয়।
গুজরাত, রাজস্থান, হিমাচল, গোয়া, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলিতে গ্রামাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার খরচ এত বেশি কেন?
স্বাস্থ্য দফতরের অনেক সমীক্ষার দায়িত্ব সামলেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা অরিজিতা দত্ত। তাঁর ব্যাখ্যায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাডু, কেরল বা মহারাষ্ট্র সরকারি চিকিৎসাকে গ্রামাঞ্চলে যতটা ছড়িয়ে দিতে পেরেছে, গুজরাত বা অন্য কিছু রাজ্য তা পারেনি।’’ অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের ‘ফ্রি’ চিকিৎসা নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠলেও গত কয়েক বছরে সরকারি হাসপাতালে রোগীও বেড়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের একটি কেন্দ্রীয় রিপোর্ট জানিয়েছিল, গ্রামীণ গুজরাতে প্রয়োজনের তুলনায় সার্জনের ঘাটতি ৯০ শতাংশ, স্ত্রীরোগ ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের ঘাটতি ৯৫ শতাংশ।
তবে শহরাঞ্চলে চিকিৎসা-খরচ পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে একটু হলেও কম গুজরাতে। প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যে রোগী-পিছু তা প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার টাকা। পশ্চিমঙ্গে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার টাকা। এই তালিকায় সবচেয়ে বেশি খরচসাপেক্ষ অসম। শহরাঞ্চলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার খরচ পশ্চিমবঙ্গ বা গুজরাতের থেকে বেশ অনেকটাই কম কর্নাটক, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ বা দিল্লিতে।