‘ফ্রি’ চিকিৎসায় কতটা লাভ ক্যানসার রোগীদের

স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব নথিই বলছে, বহু ক্ষেত্রে যেমন রোগ নির্ণয় পর্যন্ত হয় না, তেমন অনেকে সরকারি হাসপাতালের লম্বা লাইনে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে করতেই মারা যান।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

সরকারি হাসপাতালে ক্যানসারের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসাও হয় নিখরচায়। কিন্তু তার পরেও এ রাজ্যে প্রতি বছর যত জন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি চিকিৎসার আওতার বাইরে থাকেন। স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব নথিই বলছে, বহু ক্ষেত্রে যেমন রোগ নির্ণয় পর্যন্ত হয় না, তেমন অনেকে সরকারি হাসপাতালের লম্বা লাইনে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে করতেই মারা যান।

Advertisement

সম্প্রতি প্রকাশিত একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে দেখা গিয়েছে, ভারত-সহ একাধিক দেশে ক্যানসারের চিকিৎসা সম্পূর্ণ করতে না পারার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেশি। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করেছেন, এ রাজ্যের ছবিটাও সমান অন্ধকার। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে কী হল? স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে বিপুল ভিড়। তাই চিকিৎসার সুযোগ পেতেই মাস পেরিয়ে বছর ঘুরে যায়। তবে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির টাকা জোগা়ড় করতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে।’’

যদিও সরকারের এই নীতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সকলের জন্য নিখরচায় চিকিৎসার দরকার ছিল না। যাঁরা খরচ করতে পারবেন, তাঁদের জন্য বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে কম খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে আদতে অনেক বেশি রোগী উপকৃত হতেন। আর ভিড়টাকেও ভাগ করে দিয়ে অপেক্ষার লাইন কমানো যেত।

Advertisement

বেসরকারি হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা, ‘‘রোগীকে হয় সরকারি হাসপাতালের ভিড়ে দাঁড়াতে হবে, নয়তো ঘটিবাটি বিক্রি করতে হবে। এর মাঝামাঝি একটা ব্যবস্থা থাকা জরুরি ছিল।’’ ক্যানসার চিকিৎসক স্থবির দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সব ধরনের ক্যানসারে কেমোথেরাপি কাজে লাগে না। অথচ সরকার জনমোহিনী নীতির কারণে কেমোথেরাপি ফ্রি দিচ্ছে। তা না করে ক্যানসারের উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করলে হয়তো আরও বেশি সংখ্যক মানুষ উপকৃত হতেন।’’

কেন সরকার তা করে না? দফতরের ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘কেমোথেরাপি ফ্রি দিলে যতটা জনপ্রিয়তা বাড়ে, উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা ফ্রি-তে করলে তা বাড়ে না।’’ আর ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালে সব ফ্রি হয়ে বহু মানুষের কাছে চিকিৎসা পৌঁছচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তা করতে গিয়ে যে টাকা লাগছে, তা বেশি দিন টেনে নিয়ে যাওয়া কঠিন।

অথচ সরকারি হাসপাতালে ‘ফ্রি’ চিকিৎসার লাইন এড়াতে গেলে সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা। কারণ, বেসরকারি হাসপাতালে বিপুল খরচ। ক্যানসার চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ দিক রেডিওথেরাপি। সরকারি হাসপাতালে এখনও কোবাল্ট যন্ত্র ব্যবহার করা হলেও কোবাল্টের চেয়ে উন্নত এবং দামী ‘লিনিয়র অ্যাক্সিলেরেটর’ যন্ত্র ব্যবহার হয় বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে। তাতে খরচ দুই থেকে চার লক্ষ টাকার মতো। চিকিৎসা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকের প্রশ্ন, বেসরকারি হাসপাতালেও কেন কোবাল্ট থাকবে না? সে ক্ষেত্রে সামর্থ অনুযায়ী চিকিৎসা বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকত রোগীর। বেসরকারি হাসপাতালগুলির তরফে আবার পাল্টা প্রশ্ন, কেনই বা পুরনো প্রযুক্তি আঁকড়ে থাকবে তারা? তবে দামি যন্ত্রে যে আর্থিক লাভ হয়, তা অস্বীকার করেনি তারা। তা হলে? রোগী যাবেন কোথায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন