—ফাইল চিত্র।
মোদীর সঙ্গে তাঁর হাসি মুখের ছবি এখনও ম্লান হয়ে যায়নি। আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত জনমানসে সেই হাসি মুখের ছবিটি থেকে যাক, এটা অন্তত তৃণমূল নেত্রী চাননি। তাই, ২১ জুলাইয়ের ধর্মতলার সভা থেকে কার্যত বিজেপি বিরোধী বার্তাকেই জোরাল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুঝিয়ে দিলেন, বিজেপি-র সঙ্গে কোনও ভাবেই সন্ধি নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি কেন্দ্রের মোদী সরকারের সমালোচনাতেও সরব হলেন। এমনকী বেছে বেছে মোদীর কেন্দ্রীয় উন্নয়ন প্রকল্পের সমালোচনা করলেন তিনি।
ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউস। এখানেই মঙ্গলবার মা-মাটি-মানুষ দিবসে শহিদ স্মরণে সভার আয়োজন করে যুব তৃণমূল। ঠিক এক বছর আট মাস আগে এখানেই একটি সভার আয়োজন করেছিল রাজ্য বিজেপি। নানা টালবাহানার পর একেবারে শেষ মুহূর্তে এখানে তারা সভা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই সভায় মুখ্য বক্তা ছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক অমিত শাহ। তাঁর উপস্থিতিতে রাজ্যে বিজেপি-র তত্কালীন পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ তৃণমূল নেতৃত্বকে তুলোধনা করেন। সেই বক্তৃতায় সিদ্ধার্থনাথ বলেছিলেন, ‘‘২০১৪-য় ভাগ মদন ভাগ। ২০১৫-য় ভাগ মুকুল ভাগ। ২০১৬-য় ভাগ মমতা ভাগ।’’ এ দিন সিদ্ধার্থনাথের সেই বক্তব্যের পাল্টা দেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ববি)। তিনি বলেন, ‘‘যারা ভাগ মমতা ভাগ বলেছিল, বাংলার মানুষ তাদের ভাগিয়ে দিয়েছে। তাদের কোনও অস্তিত্ব নেই।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘বামফ্রন্টের গুলিকে আমরা ভয় পাইনি। সাম্প্রদায়িক শক্তি তোমাদের ষড়ষন্ত্রেও কিছু হবে না।’’ এর পরেই কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে ববির বার্তা, ভারতের বুক থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তি উত্খাত করার সময় এসেছে।
ববি যে দলীয় লাইনের কথাই বলেছেন তা পরে মমতার কথাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লির শাসকদলের কাছে মাথা নত করতে রাজি নই। সিপিএমের কাছেই মাথা নত করিনি, আর তোমরা তো দাঙ্গায় পুষ্ট দল, দুর্নীতিতে পুষ্ট দল। তোমরা আমাকে দুর্নীতি শেখাচ্ছ!’’ যারা অন্ধ কুত্সার সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছে তৃণমূল তাদের সমর্থন করে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। বাংলাকে ভাগ করা যাবে না, এ কথা জানিয়ে মমতার হুঁশিয়ারি: ‘‘মনে রাখবেন হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান— সবাই এখানে মিলেমিশে থাকে এবং থাকবে।’’ তিনি জানান, পবিত্র ইদকে কেন্দ্র করে দিল্লির শাসকদল বাংলাকে অপমান করেছে। বাংলার মানুষ ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে তার জবাব দেবে বলে মন্তব্য করেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মারের বদলে মার দাঙ্গার বদলে দাঙ্গা আমাদের রাজনীতি নয়। যারা বাংলার সভ্যতা-সংস্কৃতি জানে না, মাথা উঁচু করে চলা মেরুদণ্ড জানে না, তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে।’’
আগামী বছরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের দাবি, রাজ্যের ২৭ শতাংশ মুসলিম ভোটের দিকে তাকিয়েই মোদী-মমতার হাসিচিত্র জনমানস থেকে মুছে দিতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী।