অমিত শাহের সভার দিন রাজ্য জুড়ে পথে নেমে ধিক্কার জানাবে তৃণমূল। —ফাইল চিত্র।
এনআরসি-র বিরোধিতায় গোটা রাজ্যে ফের দলকে পথে নামার ডাক দিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, শনিবার গোটা রাজ্যে ফের কালা দিবস পালন করা হবে। কালো পতাকা নিয়ে, কালো ব্যাজ পরে পথে নামবেন তৃণমূল কর্মীরা। বিভিন্ন এলাকায় পথসভা করে বিজেপি-কে তাঁরা ধিক্কার জানাবেন। কলকাতায় অমিত শাহের সভার দিনেই রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের এই কর্মসূচি নেওয়ার নিন্দা করেছে বিজেপি। বিভিন্ন জেলা থেকে বিজেপি কর্মীদের কলকাতায় পৌঁছনো রুখতেই তৃণমূল আচমকা কালা দিবসের ডাক দিল বলে বিজেপি অভিযোগ করতে শুরু করেছে।
অসমে এনআরসি-র (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনআরসি থেকে ৪০ লক্ষের বেশি অসমবাসীর নাম বাদ পড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদের দুই কক্ষেই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল সাংসদরা হইচই করেছেন। অসমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিনিধি দলও পাঠিয়েছিলেন। সেই প্রতিনিধি দলকে শিলচর বিমানবন্দর থেকেই অসমের প্রশাসন ফেরত পাঠিয়ে দেয় বলে বাংলায় দু’দিন ধরে কালা দিবস পালন করে তৃণমূল। শুক্রবার ফের জানানো হল, দু’দিন ধরে কালা দিবস তথা ধিক্কার দিবস পালিত হবে। এনআরসি থেকে এত মানুষের নাম বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ করতেই এই কর্মসূচি পালিত হবে। প্রথম দিন অর্থাৎ শনিবার ধিক্কার দিবস পালিত হবে প্রতিটি জেলার বিভিন্ন এলাকায়। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ রবিবার তা পালিত হবে কলকাতায়।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার জানিয়েছেন, দলের সমস্ত সাংসদ, বিধায়ক এবং অন্যান্য স্তরের নেতাকে শনিবার ধিক্কার দিবসে সামিল হতে বলা হয়েছে। প্রতিটি জেলার সব এলাকাতেই এই কর্মসূচি আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এনআরসি-র বিরুদ্ধে মিছিল হবে এবং পথসভা হবে বলে তৃণমূল মহাসচিব জানিয়েছেন। রবিবার কলকাতায় ধিক্কার দিবস পালিত হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেছেন।
আরও পড়ুন: তরুণীর সঙ্গে চ্যাট, ফুচকা, আড্ডা, প্রেম... কলকাতায় কী ভাবে জাল ছড়াল এটিএম-কাণ্ডের পাণ্ডা
আরও পড়ুন: অমিত-ভোগান্তির আশঙ্কায় শহর
ঘটনাচক্রে শনিবারই কলকাতায় জনসভা করছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। মেয়ো রোডের সেই জনসভায় বড়সড় ভিড় জমানোর চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি। রাজ্যের প্রায় সব জেলা থেকেই কর্মী-সমর্থকদের কলকাতায় আনতে চাইছে সভার আয়োজক যুব মোর্চা। কলকাতার কাছাকাছি বিভিন্ন জেলার বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা শনিবার সকাল থেকেই কলকাতার পথে রওনা দেবেন। প্রায় একই সময়ে জেলায় জেলায় শুরু হয়ে যাবে তৃণমূলের ধিক্কার দিবসও।
বিজেপির দাবি, আচমকা শনিবারই সব জেলায় ধিক্কার দিবস পালনের কথা ঘোষণা করা পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কালা দিবস বা ধিক্কার দিবসের নামে তৃণমূল প্রতিটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় জমায়েত করবে এবং তাদের কর্মীদের পথ আটকাবে বলে রাজ্য বিজেপির আশঙ্কা। অমিত শাহের সভায় ভিড় হওয়া রুখতে সংগঠিত ভাবে তৃণমূল পথে নামছে বলে বিজেপি মনে করছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলকে শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের যদি বাধা দেওয়া হয়, তা হলে আমরা মোকাবিলায় প্রস্তুত। শনিবার ধিক্কার দিবসের নাম করে যদি জেলায় জেলায় বিজেপি কর্মীদের পথ আটকানো হয়, তা হলে আমরাও কিন্তু চুপচাপ মেনে নেব না।।’’ দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘যদি তৃণমূল সংঘর্ষ চায়, তা হলে সংঘর্ষই হবে। তার সমস্ত দায় হবে তৃণমূলেরই।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যসভায় ভোটের পর ফের ধাক্কা বিরোধী শিবিরে, আপ বলল মহাজোটে নেই তারা
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র সায়ন্তন বসুও বললেন, ‘‘খুব স্পষ্ট করেই বোঝা যাচ্ছে, কেন শনিবারই জেলায় জেলায় কালা দিবসের কথা ঘোষণা করল তৃণমূল। সর্বত্র বিজেপি কর্মীদের পথ আটকানোর চেষ্টা করবে ওরা।’’ এর মোকাবিলার কোনও কৌশল কি বিজেপি ভেবেছে? সায়ন্তন বললেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা তো রাজ্য সরকারের কর্তব্য। আমরা প্রথমে দেখব পুলিশ-প্রশাসন কী করছে। আমাদের কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তো ছেড়ে কথা বলব না। যেখানে যেমন পথ নেওয়ার দরকার, সেখানেই তেমনই নেব।’’
তৃণমূলের তরফ থেকে ধিক্কার দিবস পালনের ঘোষণা এবং বিজেপির পাল্টা হুঁশিয়ারি আভাস দিচ্ছে যে, শনিবার সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় উত্তপ্ত হতে পারে পরিস্থিতি। বিজেপি নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি যদি উত্তপ্ত হয়, তা হলে দায় রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে।